তিন সন্তানের জননী রুনার বিয়ের ঘটকালি করবেন বলে জন্য পাত্রপক্ষের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তারই দূর সম্পর্কের মামা আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু রুনা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় তাকে। পরে, ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হত্যার পর কুঞ্চি দিয়ে রুনার চোখ উপড়ে দেওয়া হয়।
রবিবার (২ জানুয়ারি) সকালে সিআইডি হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এ তথ্য জানান।
মোঃ খোরশেদ মিয়াকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা এবং আব্দুর রাজ্জাক খানকে নরসিংদীর রায়পুরা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।”
মুক্তা ধর জানান, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মোঃ খোরশেদ মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক খান।
নিহত রুনা আক্তার (২৮) সৌদি নরসিংদীর রায়পুরার চর মরজাল গ্রামের প্রবাসী আবুল কালামের স্ত্রী এবং একই গ্রামের উত্তর পাড়ার মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়ার মেয়ে।
২০১০ সালে বিয়ে হয় রুনা আক্তারের। সাড়ে ৩ বছর আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ করে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব যান তার স্বামী আবুল কালাম। কিন্তু বিদেশে গিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ তো দূরের কথা পরিবারকেও টাকা দেওয়া বন্ধ করেন কালাম। শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা পরিশোধ করতে বলেন স্ত্রীকে। এ নিয়ে মনোমালিন্য ও নির্যাতন শুরু হয় রুনার ওপর। নারী নির্যাতনের মামলা করেন রুনা। ক্ষুব্ধ হয়ে ৪ মাস আগে ডিভোর্স লেটার পাঠায় কালাম। বাধ্য হয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান রুনা। কাজ শুরু করেন সবজি ক্ষেতে।
ডিভোর্সের পর রুনাকে নতুন করে বিয়ের প্রলোভন দেখান তার দূর সম্পর্কের মামা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি খোরশেদ নামে মিয়া নামে একজনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছিলেন। এজন্য তিনি খোরশেদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু রুনা শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় রুনাকে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, “গত ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরার চর মরজালের একটি ধানক্ষেত থেকে রুনা আক্তার (২৮) নামে এক গৃহবধূর চোখ উপড়ানো লাশ উদ্ধার করা হয়। জানা যায় যে, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রুনা বাবার বাড়ি থেকে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে আর তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নাম্বার বন্ধ পায়। গত ১৩ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন গ্রামের ধানক্ষেতে রুনার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃতের পিতা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া (৬০) অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার মামলা রুজু করেন।”