জুলাই ১৫, ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম
পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেছেন, “র্যাবের অতীত ও বর্তমানের অপকর্মের জবাবদিহি করতে হবে। একই সঙ্গে র্যাবের অর্থবহ সংস্কার করতে হবে।” সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও তিনি জানান।
ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশি সংবাদ সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
উজরা জেয়া বলেন, আমি যে বার্তার ওপর জোর দিতে চাই, তা হলো-সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানানো। আসুন আমরা জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা বর্জনের বিষয়ে উজরা জেয়া বলেন, “এটা বাংলাদেশের জনগণের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা দেখছি না। আমি শুধু বলতে চাই যে, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিই না।”
ভিসানীতি প্রসঙ্গে উজরা জেয়া বলেন-অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ঘোষিত অঙ্গীকারকে সমর্থন করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের আলোচনায় এটি খুব ইতিবাচকভাবে এসেছে।
পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, “নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ সরকারের উদারতা সম্পর্কে আমরা সচেতন। সুতরাং আমরা মূল্যায়ন করছি এবং আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। এটি যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে করে থাকে।”
ইন্দো-প্যাসিফিক
যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়েই এই সফর উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, “মার্কিন সরকার এই অংশীদারত্বকে আরও গভীর করতে চাইছে। এসময় তিনি আরও বলেন, “ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে আরও মুক্ত ও উন্মুক্ত করতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমাদের অংশীদারত্ব অভিন্ন গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। জেয়া বলেন, অনেকেই হয়তো জানেন না যে, সমগ্র এশিয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী উন্নয়ন অংশীদার।”
সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিনিয়র কূটনীতিক বলেন, “এ বিষয়ে আমি খুবই স্পষ্ট করে বলতে চাই। এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের সম্ভাব্য ইজারা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”
র্যাবকে জবাবদিহি করতে হবে
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উজরা জেয়া বলেন, “এটি সিদ্ধান্ত ও তথ্যের ‘সতর্ক গবেষণা ও বিবেচনার’ ফল। জেয়া বলেন, প্রকৃতপক্ষে, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যা ও জোরপূর্বক গুমের ঘটনা হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখেছি। তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, অতীত ও বর্তমানের অপকর্মের জবাবদিহি করতে হবে। একই সঙ্গে র্যাবের অর্থবহ সংস্কার করতে হবে। সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে এগুলো বিবেচনা করা হবে বলে জানান উজরা জেয়া।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন চায় বলে জানান উজরা জেয়া। এসময় তিনি আরও বলেন, “এখন দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমারে এ পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই। তাই আমরা বাংলাদেশ সরকারসহ সমমনা অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”