পঁচাত্তর পরবর্তী দূষিত সমাজ ব্যবস্থার কারণে নদীগুলো দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে নদী রক্ষার জন্য সংগ্রাম করতে হতোনা বলেও তিনি জানান।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল মিলনায়তনে মুজিব শতবর্ষ ও বিশ্ব নদী দিবস-২০২১ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ও পরিবেশ ভাবনা এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ভাবনা ও বাংলাদেশের নদীসমূহের দখল, দূষণ ও নাব্যতা সংকটঃ প্রেক্ষিত ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্প, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন; ‘বঙ্গবন্ধুর নদী ও পরিবেশ ভাবনা এবং আমাদের করণীয়’ এবং ‘সুস্থ নদী ও মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনা’শীর্ষক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
‘নদীগুলোকে রক্ষা করে এর প্রবাহ নিশ্চিত করাই নদী দিবসের অঙ্গীকার’ উল্লেখ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নদী নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে নদী রক্ষার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হতোনা। নদীর প্রবাহ ঠিক থাকত। নদীগুলো বাংলাদেশের জনগণের জীবন ও জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করত।’
দূষিত সমাজ ব্যবস্থার কারণে নদীগুলো দূষিত হয়ে গেছে মন্তব্য করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর দুর্নীতিবাজ সমাজ ব্যবস্থা লুটেরা সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছে এবং এ জায়গা থেকে আমাদের নদীগুলোও রক্ষা পায় নাই। যখন পুরো সমাজ ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজ হয়ে যায়, লুটেরা স্বভাবের একটি সমাজ হয়। রাষ্ট্র এদের লালন-পালন করে। সেখানে ভাল কিছু থাকেনা।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন সম্পর্কে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সার্বিকভাবে ধারণ করতে পারলে বিশ্ব আসনে বাংলাদেশকে আরো মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুকে পুরোটাই আমাদের মাঝে নিতে পারি, তাহলে নদীমাতৃক এ বাংলাদেশকে সার্বিকভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সেটা আমাদের সামনে দৃশ্যমান।
তিনি আরও বলেন, জতির পিতাকে আমরা সার্বিকভাবে ধারণ করেছি বলেই, আজকে বাংলাদেশ মর্যাদার জায়গায় গেছে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচক বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়; এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার জন্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করার জন্য। এই জায়গাটায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
নদী দখল হওয়ার বিষয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই যে দুরবস্থা, এটা এমনি এমনি আসেনি। কিছু মানুষ ভাবতো জায়গা ফাঁকা আছে, এটাই আমার পছন্দ, এটাই আমার দখল করতে হবে। এভাবেই কিন্তু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় নদী দখল উচ্ছেদ সম্ভব হয়েছে জানিয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আমরা যখন ঢাকার চারপাশে নদী দখল উচ্ছেদ শুরু করলাম, আমরা কিন্তু দেখিনি কোনটা কার জায়গা। প্রধানমন্ত্রী যে সাহস আমাদের দিয়েছেন, সে সাহসে আমরা কাজ করছি। এই ঢাকার চারপাশ আমরা দখলমুক্ত করেছি। সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।’
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য কামরুন নাহার আহমেদ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক ইকরামুল হক।