মার্চ ২৯, ২০২৩, ০৪:২৩ পিএম
সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল বলেছেন, কী অপরাধটা করেছে সেই সাংবাদিক? সত্য যে ঘটনা, সেই ঘটনা সে তুলে ধরেছে। একজন মানুষের উক্তি সে তুলে ধরেছে। কি এমন অপরাধ হয়েছে? যে, মানুষ যদি স্বাধীনতার দিন ক্ষুধার্ত বোধ করে, সে যদি বঞ্চিত বোধ করে এবং সে যদি ওই মন্তব্য দেয় যে, আমার এই দেশ স্বাধীন হয়ে কি লাভ হলো। কি অপরাধটা করেছে, অপরাধটা কোথায়?
আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
এর আগে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে আজ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে সংলাপে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি। ‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো আলাপ নেই’—এমন কথা বলে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন ফখরুল। গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) চিঠির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশন ও সিইসির ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। ফখরুল বলেন, যার কোনো ক্ষমতাই নেই আমাদের সমস্যা সমাধান করার, দেশের, জাতির, তাঁর কাছে এই সুযোগ (সংলাপের) আমরা কেন নেব। উনি তো মেইল বক্স নন যে, ওনার কাছে পাঠিয়ে দিলাম আর উনি পাঠিয়ে দিলেন সরকারের কাছে। এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের ব্যাপার। যেহেতু সরকারের সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। যেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সেখানে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। কারণ সরকার সংবিধান সংশোধন করেছে। সংবিধান পরিবর্তন করেই এই জায়গায় নিতে হবে। এটা সরকারের সাথেই আলোচনা করতে হবে, সরকারকেই আসতে হবে।
তবে চিঠির জন্য সিইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) যথেষ্ট ভদ্র মানুষ। তাঁর ভাষাও অত্যন্ত মার্জিত। তাঁর পাঠানো আবেদনের ভঙ্গিও অনেক ভালো। কিন্তু আমরা তো বাস্তবতাটা জানি। তাঁর যেখানে ক্ষমতাই নেই কিছু করার, তাঁর সাথে কী আলোচনা করব?
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, সভা মনে করে বর্তমানের মূল রাজনৈতিক সংকট নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সাথে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না এবং তা হবে অর্থহীন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়। ইচ্ছা থাকলেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষমতা কমিশনের নেই। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময়ে সম্ভব নয়, সে কারণে বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছে না।
বিএনপি এবারও ওয়াকওভার দেবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ওয়াকওভারে বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে ১০০ বার নির্বাচনে যাব। সেরকম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে কি হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।
র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু, সাংবাদিক হয়রানিসহ বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান সরকার জনবিচ্ছিন্ন, জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে একটা নির্বাচন দেখাতে হবে। নির্বাচনের আগে ভিন্নমতকে দমন করতে ভীতি প্রদর্শন করা, ত্রাস সৃষ্টি করার অংশ হিসেবে আবারও ভয়–ভীতি ছড়ানো হচ্ছে।