নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনার ৯ বছর পার হলেও এই মামলায় দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে দেওয়া ফাঁসির রায় এখনও কার্যকর হয়নি। মামলা দায়েরের তিন বছর পর আদালত ওই রায় দিলেও দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে। দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ও ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের হলে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন।
পরে হাইকোর্টে আপিল করা হলে আদালত ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। তবে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আটকে রয়েছে।
নিহতদের স্বজনরা মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। একই সাথে তারা ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান।
সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। সংগৃহীত ফাইল ছবি
নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আসামিরা খুব প্রভাবশালী। তারা জেলে অবস্থান করলেও এলাকায় এখনও তাদের প্রভাব রয়ে গেছে।'' আপিল বিভাগে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আজকে এই হত্যাকাণ্ডের নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু রায় কার্যকর হয়নি। তাহলে আমাদের শঙ্কা থেকেই যায়। প্রকৃতপক্ষে আসামিরা কী তাহলে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে? এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।''
বাদিপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘‘নিম্ন আদালতে এই মামলার রায় দ্রুত হয়েছে। নিম্ন আদালতে সাজার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে, হাইকোর্ট আপিলটি দ্রুত নিষ্পত্তি করেন। তবে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, মামলাটি উপস্থাপন করা হয়নি। আমরা চাই, রায় বহাল রেখে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক ও এই মামলার রায় কার্যকর করা হোক।''
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহরণের শিকার হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাত জন।
অপহরণের তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ছয় জন এবং পহেলা মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদি হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।