সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক শিমুল হত্যার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিতে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম

সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক শিমুল হত্যার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিতে

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুকে জেলা শাখা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।এতে ক্ষুব্ধ শিমুলের পরিবার ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে মুক্তিযোদ্ধা কে. এম হোসেন আলী হাসানকে সভাপতি ও আব্দুস সামাদ তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। ওই কমিটিতে সদস্য পদ হিসেবে সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরুর নাম রয়েছে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান সভাপতি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্দুস সামাদ তালুকদারের নাম ঘোষণা করেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নিহত দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল। ছবি: সংগৃহীত 

সম্মেলনের ১১ মাস ২২ দিন পর ১৯শে ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা এক চিঠিতে ৭৪ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি ও ২৭ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরু।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিমুল হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া ছয় বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। এরই মধ্যে কমিটিতে পদ পাওয়ায় নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহারসহ তার স্বজনরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি উদ্বেগ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিমল কুমার কুণ্ডু গণমাধ্যমকে বলেন, ছয় বছরেও হত্যা মামলার কার্যক্রম এগোয়নি। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি মিরুকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ দেওয়ায় আমরা মর্মাহত। “

অন্যদিকে, নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, “হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরে বিচার না পেয়ে আমরা হতাশ। মিরুসহ আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে মামলায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। আবার প্রধান আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন। এতে প্রভাব আরও বাড়বে।”
তবে জেলা শাখা কমিটিতে মিরুর স্থান পাওয়া প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসান জানান, সাংবাদিক শিমুল হত্যাকাণ্ডের মামলায় মিরু আসামি হলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি বা তিনি দোষী প্রমাণিত হননি। ছয় বছর আগে তাকে কেন্দ্র থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অভিযুক্ত না হলে তিনি পদ পাবেন। তাই কার্য নির্বাহী কমিটির খসরা তালিকায় তাকে সদস্য করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। তবে বিচারে অভিযুক্ত হলে তাকে অবশ্যই বাদ দেয়া হবে।”

এ বিষয়ে শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরু গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাকে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা মামলার প্রধান আসাসি করা হয়েছে। আদালত এখন পর্যন্ত আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। তাই আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে পদ পেতেই পারি।”

প্রসঙ্গত, গত ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল। ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই বছরের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে মিরুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২ বছর সাড়ে ৯ মাস কারাভোগ করেন তিনি। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। গ্রেফতারের পরপরই দল থেকে মিরুকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। মেয়র পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

Link copied!