অগ্নিকান্ড নির্বাপণে অব্যবস্থাপনা,প্রযুক্তিগত অভাব ও জনসাধারণের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকার কারনে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অগ্নিদূর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা। গত ১৬ বছরে অগ্নিদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৩৮৪ জনের। আহত হয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার। অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা তথা আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে যুগোপযোগী করার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
হতাহতের হিসেব
২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া গেছে হতাহতের এ হিসাব। এরমধ্যে ২০২০ সালে অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৫৪ জন। আহত হয়েছেন ৩৮৬ জন। তার আগের বছর ২০১৯ সালে নিহত হয়েছেন ১৮৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৫৭১ জন। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪৮৫ জন অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত এবং ৩ হাজার ৮৬৮ জন আহত হয়েছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ১২৮ জন নিহত ও ৫ হাজার ৮১৭ জন আহত হয়েছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৬৫ জন নিহত এবং ১ হাজার ৭৩২ জন আহত হয়েছেন। এসবের বাইরে এ সময়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে প্রাণ হারান আরও ২০৪ জন এবং আহত হন ১ হাজার ৭০৬ জন। আর ২০২১ সালে এ পর্যন্ত ৬৭ জন অগ্নি দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।
সম্প্রতি ঘটা অগ্নিকান্ড
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকান্ডে ৫২ জন মারা গিয়েছে। গত ২৭ জুন মগবাজারের ভবন বিস্ফোরণে ১১ জন নিহত হয়। ২২ শে এপ্রিল পুরান ঢাকায় আরমানিটোলায় রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকান্ডে ৪ জন নিহত হয়। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে কারখানায় সবচেয়ে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের ওই অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন পোশাক শ্রমিক নিহত ও ২০০ জনের অধিক আহত হন। সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ১০১ জন শ্রমিক ও আগুন থেকে রেহাই পেতে উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় আরও ১০ জনের।
প্রতি উপজেলায় হচ্ছে ফায়ার স্টেশন
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে বেশি জরুরি জনসচেতনতা। সাধারণ মানুষ যত বেশি সচেতন হবেন, দুর্ঘটনাও তত কমবে। ফায়ার সার্ভিসকেও যুগোপযোগী হতে হবে। সেদিকে খেয়াল রেখে সব ধরনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমাদের জনশক্তি বাড়ানো হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু শহরকেন্দ্রিক সেবা নয়, অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। সেজন্য প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।