২১ কোটি টাকা ও ৭ তলা বাড়ির মালিক বস্তির রহিমা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৯, ২০২২, ১২:০০ এএম

২১ কোটি  টাকা ও ৭ তলা বাড়ির মালিক বস্তির রহিমা

রহিমা বেগমকে এক যুগ ধরে চেনেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাহমুদনগরের স্থায়ী বাসিন্দা অলিউল্লাহ (৬৫)। তাঁরই চোখের সামনে ১০ বছর আগে মাহমুদনগরে সাততলা বাড়ি বানান রহিমা। অলিউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মাহমুদনগরে রহিমার বাড়িটিই প্রথম সাততলা ভবন। তবে রহিমার আয়ের উৎস কী, সেটি তখন জানতাম না। পরে শুনেছি ঢাকায় রহিমা বেগম নাকি মাদকের ব্যবসা করে অল্প সময়ে অনেক পয়সার মালিক বনে গেছেন।’

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরীয়তপুরের রহিমা বেগমের বেড়ে ওঠা ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। সেখানে নামাপাড়া বস্তিতে থাকতেন পরিবার নিয়ে। সেখানেই হযরত আলী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় তার। পরে বস্তি এলাকাতেই স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। গত ১০ বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যান তারা। রহিমার স্বামী হযরত আলী ২০১৯ সালে “ক্রসফায়ারে” নিহত হন।

মাহমুদনগরে রহিমার বাড়ির দেখভাল করেন নিহার বেগম নামের এক নারী। ২০ জুন নিহার মুঠোফোনে বললেন, ‘রহিমা আপা এক বছর আগে এই বাড়িতে এসেছিলেন। আর তিনি আসেন না। তবে লোক পাঠিয়ে ভাড়ার টাকা নিয়ে যান। শুনছি রহিমা আপার নামে মামলা-মোকদ্দমা আছে। রহিমা আপা কোথায় থাকেন, জানি না।’

রহিমা বেগম খুনের মামলার অভিযুক্ত আসামি। এ মামলায় জামিন নিয়ে পাঁচ বছর ধরে লাপাত্তা তিনি। তাঁর নামে ঢাকায় মাদকের এক ডজনের বেশি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। চার মাস আগে রহিমা বেগমের ব্যাংক হিসাবে ১২ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এর বাইরে রহিমার স্বামী ও তাঁর স্বজনদের ব্যাংক হিসাবে মিলেছে আরও ৯ কোটি টাকা। সাততলা বাড়ি ছাড়া রহিমার নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আরও কয়েক কাঠা জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রহিমার বিরুদ্ধে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী থানায় অর্থ পাচার আইনে মামলা হয়েছে।

মামলার বাদী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক ব্যবসা করে রহিমা বেগম ও তাঁর স্বামীর অপরাধলব্ধ আয় নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করি। সেই অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক ব্যবসা করেই তাঁরা বাড়ি, জমিসহ স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন।’

তবে মামলা দায়েরের চার মাস পার হলেও রহিমার খোঁজ মিলছে না বলে জানালেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বাহাউদ্দিন। তিনি বলেন, রহিমা ও তাঁর স্বজনদের ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা ২১ কোটি টাকা, সাততলা বাড়ি, জমিসহ সম্পদ যাতে স্থানান্তর বা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, ‘রহিমা কোথায় আছেন, সেই খোঁজ কেউ দিতে পারছেন না।’

অবশ্য খুনসহ অন্য মামলায় রহিমার পক্ষ থেকে আদালতের কাছে লিখিতভাবে দাবি করা হয়েছে, রহিমা নিরপরাধ। হয়রানির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলার তথ্য বলছে, রহিমা বেগমের তিনটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। ১৪ বছর আগে (২০০৮ সাল) দুটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। আরেকটি হিসাব খোলা হয় ২০১৭ সালে। এই তিন ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হয় ১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

এ ছাড়া রহিমার স্বামী হযরতের নামে দুটি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। ১০ বছর আগে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। অন্যটি খোলা হয় চার বছর আগে। এই তিন ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া রহিমা–হযরত দম্পতির দুই ছেলের ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ৭ লাখ টাকা জমার তথ্য মিলেছে।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, রহিমার বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া থানায় আটটি মাদকের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানায় তিনটি এবং রামপুরা থানায় একটি মাদকের মামলা রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা করে পুলিশ। প্রতিটি মামলায় রহিমাকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। মামলাগুলো ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন।

Link copied!