সড়কে ৫ বছরে ৫,৬১৯ শিক্ষার্থীর প্রাণহানি

জাতীয় ডেস্ক

জুলাই ১৩, ২০২৪, ১০:০৯ এএম

সড়কে ৫ বছরে ৫,৬১৯ শিক্ষার্থীর প্রাণহানি

ছবি: সংগৃহীত

বাস, থ্রি-হুইলার (ত্রিচক্রযান), মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহন দুর্ঘটনায় ২০১৯-২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৫ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী। একই সময় গণমাধ্যমে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৪ হাজার ৪৭৮ জন নিহতের খবর এসেছে। সেদিক থেকে শিক্ষার্থী নিহতের হার ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।

শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নিজেদের কার্যালয়ে সড়ক দুর্ঘটনার এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।

মিরসরাইয়ে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে গিয়ে অন্তত ৪৫ জনের প্রাণহানির ১৩তম বছরে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।

২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে অন্তত ৪৫ জন প্রাণ হারান। ট্রাকটিতে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষে বাড়ি ফিরছিল ৪২ শিক্ষার্থী। সেই দুর্ঘটনায় তাদের সঙ্গে আরও তিনজন নিহত হন।

সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৬৪১ জন (শতকরা হিসাবে ৪৭ শতাংশ)। ১৮ থেকে ২৫ বছর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৯৭৮ জন (শতকরা হিসাবে ৫৩ শতাংশ)৷

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে এক হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থী পথচারী যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায় নিহত হয়েছেন। যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছেন ৭২১ জন শিক্ষার্থী।

সাড়ে ৫ বছরে মোটরসাইকেলচালক বা আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৭৮৩ জন। অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩-২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা বাইকের চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনা আঞ্চলিক ও মহাসড়কে বেশি ঘটেছে।

সাড়ে ৫ বছরের দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, এ সময়ে গ্রামীণ সড়কে ১ হাজার ৩৩৯ জন, শহরের সড়কে ১ হাজার ৪৮৬ জন, আঞ্চলিক সড়কে ১ হাজার ৬৫১ জন, মহাসড়কে ১ হাজার ১৪৩ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারান।

সংস্থাটি আরও জানায়, এ সময়ে গ্রামীণ সড়কে ১ হাজার ৩৩৯ জন, শহরের সড়কে ১ হাজার ৪৮৬ জন, আঞ্চলিক সড়কে ১ হাজার ৬৫১ জন, মহাসড়কে ১ হাজার ১৪৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ থ্রি হুইলার (ত্রিচক্রযান); ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ পণ্যবাহী মোটরযানে চাপা; ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাসচাপা;  ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বাইসাইকেল ও প্যাডেল রিকশা দুর্ঘটনার শিকার।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা; সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার না থাকা; শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর মানসিকতা ও ট্রাফিক আইন না জানা এবং না মানার প্রবণতাকে বড় কারণ হিসেবে দেখছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো টেকসই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা অনেকটা অবৈজ্ঞানিক ও সমন্বয়হীন।”

সড়ক পরিবহন খাতে নৈরাজ্য নিয়ে তিনি বলেন, “সড়ক পরিবহন খাতের স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা। এই গোষ্ঠী নিজেদের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির স্বার্থে সড়কে বিশৃঙ্খলা বজায় রাখে। মাঝেমধ্যে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কমিটি গঠন ও সুপারিশ তৈরি করা হয়, কিন্তু কোনো সুপারিশই আলোর মুখ দেখে না। মূলত কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরির মধ্যেই দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ঘুরপাক খাচ্ছে।”

দেশের নৈরাজ্যকর সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত টেকসই পরিবহন কৌশল বাস্তবায়ন ও সড়ক পরিবহন আইনের বাধাহীন প্রয়োগে গুরুত্বারোপ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

সংবাদ সম্মেলনে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ জাহাঙ্গীর, ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফেরদৌস খান, ট্রেজারার ড. জাহিদুল ইসলাম, লিগ্যাল ইকোনমিস্ট মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!