বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দলমত দমনে মাত্রারিক্ত বল প্রয়োগ করা ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের শাস্তি দাবি করেছেন ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ৷
মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে৷
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিস্থাপিত প্রমিত পদ্ধতি অনুসরণকে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত পুলিশ সদস্যকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে ৬৮ দশমিক ২৭ শতাংশ সমর্থন করেছেন।
জরিপে আরও দেখা গেছে, সভা-সমাবেশ আয়োজনে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনের পূর্বানুমতিগ্রহণকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থি মনে করেন ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা। অন্যদিকে প্রত্যয়টির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ১০ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা এ বিষয়ে অনিশ্চিত বা দ্বিধান্বিত।
একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সভা-সমাবেশ আয়োজন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন আইন ১৯৭৬ এর ২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী পুলিশ কমিশনারকে অনুরুপ সমাবেশ জনস্বার্থে সর্ব্বোচ্চ ৩০ দিন স্থগিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আয়োজনে পূর্বানুমতি গ্রহণের বিষয়টি সেখানে উল্লেখ নেই। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকাশে ৭১ দশমিক ২ ভাগ উত্তরদাতা বিধানটির পরিবর্তন চান।
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুরা ‘আগের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে’: ভিওএ জরিপ
আরও পড়ুন: ভিওএ বাংলা জরিপঃ আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেয়ার পক্ষে ৫৭% মানুষ
জরিপে দেখা যায়, উত্তরদাতাদের শতকরা ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা বিধানকে সহজে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন। উত্তরদাতাদের ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ ধারাটি যুগোপযুগী সংস্কার চান। ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ৫৪ ধারায় বিধান যুগোপযুগী করার অর্থ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে বিজ্ঞানসম্মত জীবনমাত্রার সুফলযুক্ত ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ উচ্চ আদালতের সুপারিশমতে ৫৪ ধারায় বিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ: এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৪২ জন৷ এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছরের বয়সীদের অংশগ্রহণের হার ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ৷ তবে উত্তর দিয়েছেন প্রায় ৯৫ শতাংশ৷ উত্তরদাতাদের মধ্যে চাকরিজীবী ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ছাত্র ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, ব্যাবসায়ী ৭ দশমি ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য ৭ দশমিক ১ শতাংশ। এসব উত্তরদাতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক হলো ঢাকা জেলা এবং পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়৷
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে সর্বাধিক মতামত এসেছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশের পক্ষে৷ এছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে নিরপেক্ষ পুলিশ এবং তৃতীয় অবস্থানে দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চাই এমন ক্যাটাগরিতে মতামত এসেছে৷
পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা৷ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চান ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
এছাড়া গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত মানবাধিকারের চরম লংঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেছেন ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা৷ ভুয়া ও গায়েবি মামলার অবসান চান ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা৷