বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ১১

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২১, ২০২৫, ০৩:৪০ পিএম

বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ১১

ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গাজীকালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজন নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছেন।

মঙ্গলবার, ২১ মে সন্ধ্যার দিকে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। তবে জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

আহত জামায়াতের নেতাকর্মীরা হলেন- জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহেন্দ্রপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, জামায়াতের কর্মী কুদ্দুস প্রামাণিক (৭০), শহিদুলের ছেলে তুহিন হোসেন, আক্কাস আলীর ছেলে জিহাদ হোসেন, সুকচাদের ছেলে জামাত আলী, জালালের ছেলে ইউনুস আলী। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

আহত বিএনপির নেতাকর্মীরা হলেন- খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, গফুর শেখের ছেলে সুকুর শেখ, আজিজলের ছেলে শরীফ, আসাকুর রহমান। তারা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছর ধরে হোগলা চাপাইগাছি বাজারে গাজীকালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয়রা। ১৭ মে থেকে মেলা শুরু হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে মেলা বন্ধের দাবি তোলেন জামায়াত ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। আর প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও বিএনপির সমর্থকরা মেলা বসানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল থেকে এলাকায় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে সন্ধ্যার দিকে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জামায়াত-শিবিরের কয়েক নেতাকর্মীরা হাঁসুয়া, রাম দা, লাঠিসোটা নিয়ে অন্তত ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন।

এ দিকে সংঘর্ষের কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষের অংশ নিয়েছেন কয়েক শত জামায়াতের নেতাকর্মী। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করছেন তারা। 

রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভিড় করেছেন। আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের দেখতে এসেছেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন।

এ সময় হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেলায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়ার আসর বসানো হয়। সেজন্য প্রশাসন অনুমতি দেননি। তবুও বিএনপি ও মেলা কমিটি এ আয়োজন করেছে। আমরা মেলার বিষয় জানতে গেলে প্রতিপক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমিসহ আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির সমর্থক ও খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, ‘জামায়াতের শত শত লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। বিচার চেয়ে থানায় মামলা করব।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ী নাদের শেখ (৬৫) বলেন, বহু বছর ধরে মেলা বসছে। আজ দেখলাম দুপক্ষের মারামারি। জামায়াতের লোক বেশি ছিল। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।

উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসাইন বলেন, ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াতের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে মেলা কমিটির লোকজন হামলা করেছে।

কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, মেলা বসানো নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!