গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ও বিএনপি নেতা ও বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ পরিচয়ে বিএনপি কার্যালয়ে এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁর নাম বলা হয় মিয়ান আরাফি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।
পরদিন রবিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বিমানবন্দরে আরাফিকে আটক করে ডিবির হাতে তুলে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।
ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মিয়ান আরাফি জানান, বিএনপি নেতা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সাথে ২৮ অক্টোবর বিএনপি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করে মিয়ান বলেন, বিএনপির শেখানো কথাই তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন।
ডিবি কার্যালয়ে দেয়া বক্তব্যে আরাফি বলেন, ২৮ অক্টোবর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আমাকে বিএনপির পার্টি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে ইশরাকও উপস্থিত ছিলেন। আরও অনেকে ছিলেন যাদের আমি চিনি না। পরে আমাকে তারা ডেমোক্রেট কমিটির লিডার এবং জো বাইডেনের এডভাইজর বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানান। আমি তাদের শিখিয়ে দেয়া কথা সেখানে বলি।’
নিজের ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাকে বিএনপি অফিসে শিখিয়ে দেয়া কথা বলানো হয়। আমি যা বলেছি তার জন্য আমি দুঃখিত, আমার ভুল হয়েছে। আমাকে তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল কী বলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে বলা হয়নি সেদিন বিএনপির সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। বিচারপতির বাসভবনেও হামলা হয়েছে। রাস্তাতে আগুন লাগিয়েছে। একজন পুলিশও মারা যায়। অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এটা আমি জানতাম না। বিষয়টি তারা ঠিক করেনি, আমারও ভুল হয়েছে।’
এ সময় নিহত পুলিশের প্রতি শোক জ্ঞাপন করে ও বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তাদের এমন করা ঠিক হয়নি।’
এর আগে রবিবার রাতে মিয়ান আরাফির বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতেই আরাফিকে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়।
হারুন বলেন, বিমানবন্দর থেকে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে বিএনপি নেতারা শিখিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি সব কথা স্বীকার করেছেন। তিনি একজন প্রবাসী।
মিয়ান আরাফির বরাত দিয়ে হারুন আরও বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতেই আরাফিকে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়। যে কথাগুলো তাকে বলতে বলা হয়েছিল, সেগুলোই তিনি বলেছেন। আসলে এসব কথা তাকে দিয়ে বলানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ান আরাফির বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য পুরোপুরি অসত্য।’
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা মিয়ান আরাফি ওরফে জাহিদুল ইসলাম আরেফি বেল্লাল একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। তবে তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, শুধু মার্কিন পাসপোর্ট রয়েছে। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়।
২০২৩ সালে এইবার নিয়ে দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসেন আরাফি। এর আগেরবার এসে টানা ৫ মাস তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করেন। এছাড়া ২০২২ সালেও তিনি দুইবার বাংলাদেশে আসেন।