শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে, অধ্যাদেশে আরও যা থাকছে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১৭, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম

শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে, অধ্যাদেশে আরও যা থাকছে

ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হচ্ছে। এতে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার আলাদাভাবে করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হচ্ছে।

সোমবার, ১৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রাণ হারানো আট বছরের শিশুটির ঘটনাসহ নারী নিপীড়নের বেশ কিছু ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দিন আগেই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে এসব মামলায় তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর বিচার শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে। এ ছাড়া ডিএনএ সনদের পরিবর্তে শুধু চিকিৎসা সনদ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচারক এ মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাদেশের সংশোধিত খসড়ায় যা আছে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশের খসড়ায় কী কী আছে, সেসব বিষয়ে তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আগেই দুটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই আইনে বিচার ও তদন্তের সময় কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খসড়ায় শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার আলাদাভাবে করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সবাই (উপদেষ্টারা) নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন।

নারী ও শিশু আদালতে ধর্ষণের মামলার জট লাগার কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, কারণ, এখানে দুই ধরনের মামলা আসে। সম্মতিসহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মামলার আধিক্য ছিল। আরেকটি হলো সম্মতি ব্যতিরেকে যে ধর্ষণের মামলা, সেগুলোর বিচার আটকে থাকত। তিনি বলেন, ‘সে জন্য আমরা বিধান যুক্ত করেছি, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্মতি নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে হোক... সেই ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিচার আলাদা অপরাধ। আর সম্মতি ব্যতিরেকে মাগুরার ক্ষেত্রে, বরগুনার ক্ষেত্রে যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেই ধর্ষণ ঘটনা আলাদা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সম্মতি ব্যতিরেকে যে ধর্ষণ, সেটার ক্ষেত্রে বিচার ও তদন্তের সময় কমানো হয়েছে। এ মামলাগুলোর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তনের কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বলৎকারকেও এখানে যুক্ত করা হয়েছে। যেকোনোভাবে ধর্ষণ করা হলে সেটি ধর্ষণের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের উদ্দেশ্যে যদি জখম করা হয়, সেটিরও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ডিএনএ পরীক্ষার সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় অনেক মামলা বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকত উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা বলেন, বিধান করা হচ্ছে ডিএনএ পরীক্ষার সনদ ছাড়াই আদালত যদি মনে করেন, চিকিৎসা সনদ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার সম্ভব, তাহলে আদালত ডিএনএ সনদ ছাড়াই দ্রুত বিচারের জন্য চিকিৎসক সনদ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার করবেন।

ঘটনার শিকার ব্যক্তির সুরক্ষায় বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাদেশের খসড়া আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন। এরপর দ্রুত অধ্যাদেশের গেজেট হয়ে যাবে।

মাগুরার শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার খুব দ্রুত

আইন উপদেষ্টা বলেন, এই অধ্যাদেশ পাসের সঙ্গে মাগুরায় সেই শিশু হত্যা ও ধর্ষণ মামলার বিচারের সম্পর্ক নেই। তারা মনে করেন, খুবই দ্রুততার সঙ্গে এই মামলার বিচার হবে। এই মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার পথে। ডিএনএ পরীক্ষার সনদ পাওয়া যাবে দু-এক দিনের মধ্যে। তারা আশা করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই এই মামলার বিচার শুরু হবে এবং খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। যেহেতু অকাট্য অনেক প্রমাণ রয়েছে।

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি ডিএনএ ল্যাব স্থাপন হবে

মাগুরার শিশুসহ কয়েকটি ধর্ষণের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সবকিছু বিবেচনায় রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন২০০০এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ সেটিতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে কিছু মতামত পাওয়া গেছে। প্রস্তাবগুলো কাল-পরশুর মধ্যে যাচাইবাছাই করা হবে। এরপর বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে তা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পর্যাপ্ত ডিএনএ গবেষণাগার না থাকা ধর্ষণের বিচার বিলম্বের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই মুহূর্তে ডিএনএ ল্যাব আছে ঢাকায়। আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া বিশেষ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত কিছু বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। যাতে ধর্ষণসহ অন্যান্য মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যায়।

Link copied!