অক্টোবর ২০, ২০২৪, ০৯:৪৬ পিএম
গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলোচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান পান্না।
অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে সংবিধান লেখার কথা বললে, সে সিদ্ধান্তের কড়া জবাব দেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে সংবিধান রচিত হয়েছে, তার ঘোষণাপত্র পাল্টানো যাবে না। যদি তা করা হয়, তাহলে যুদ্ধ না, মহাযুদ্ধ হবে।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘রিসেট বাটনে পুশ’ নিয়ে করা মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। সাম্প্রতিক বিভিন্ন মামলায় গণহারে আসামি করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তিনি। অসংখ্য পুলিশ নিখোঁজ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য এবং মব ট্রায়ালকে সমাজের কলঙ্কজনক অধ্যায় উল্লেখ করেন জেড আই খান পান্না। এছাড়া বঙ্গবন্ধু, সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ভাস্কর্য ভাঙা, মাজারে হামলা এবং গাজী টায়ার্স ও প্রাণ-আরএফএলের কারখানার আগুন ও লুটপাট নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি।
জেড আই খান পান্নার এসব ভূমিকার মধ্যে খবর এলো তিনিও একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এ মামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ১৮০ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন জেড আই খান পান্নার নামও।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামে একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টা চালানোর। বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলার খবর সামনে আসতেই এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জেড আই খান পান্না বলেছেন, ঘটনার তিন মাস পর আমার বিরুদ্ধে মামলা হলো। এটা যে কোনো না কোনো প্রভাবশালীর ইন্ধনে হয়েছে- তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ আমি কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলাম। তিনি আরও বলেন, যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেই মেরাদিয়ায় আমি কখনো গেছি বলেও মনে হয় না।
প্রবীণ এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
এক বিবৃতিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে এ মামলাকে অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার বিষয়ে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেড আই খান পান্নার আলোচনা, মতামত ও বক্তব্যে কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টি থেকে এ ধরনের মামলা দায়ের হয়ে থাকতে পারে। একইসঙ্গে মামলাটি হয়রানিমূলক বলেও প্রতীয়মান হয় বলে মনে করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: সত্যি কি প্রবাসী সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ?
ব্লাস্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্লাস্ট এ হত্যা মামলায় শুধু মাত্র হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীনভাবে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট জেড আই খানের নাম অতিসত্বর প্রত্যাহারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো আবেদন জানাচ্ছে। একই সঙ্গে জুলাইয়ের গণহত্যার বিচারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে উচ্চপর্যায়ের উদ্যোগ গ্রহণ, আহত ও নিহত ব্যক্তিদের জন্য জরুরি আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করা এবং পাশাপাশি যেকোনো ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধের আবেদন জানাচ্ছে।’
এমএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের হয়রানিমূলক, ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করে সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীদের হেয় ও সম্মানহানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা স্বাধীন মতামত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। অপর দিকে এহেন ঢালাওভাবে হত্যা বা হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করার ফলে যারা প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হবে এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।