আগস্ট ৯, ২০২৩, ০৯:৪১ পিএম
ইয়েমেনে আল–কায়েদার হাতে অপহরণের দেড় বছর পর জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন জাতিসংঘ বাংলাদেশি কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) একেএম সুফিউল আনাম।
বুধবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।
এর আগে সুফিউল আনামের খোঁজে বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইয়েমেন যায়। মঙ্গলবার তাকে উদ্ধার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়ার পর সেখান থেকে তিনি বুধবার দেশে ফিরলেন।
বিমানবন্দরে অবতরণের পর সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাকে (এনএসআই) ধন্যবাদ জানান সুফিউল আনাম।
তিনি বলেন, ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা অপহরণ করার পর জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পারব, এটা ভাবতেও পারিনি। গত ১৮ মাস অত্যন্ত বিপৎসংকুল পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। মনে হয়েছিল, যেকোনো মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যা করবে।
ঢাকায় নেমে সাংবাদিকদের কাছে জিম্মিদশার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সুফিউল আনাম।
অপহরণ হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের জবাবে সুফিউল আনাম বলেন, “ ১৮ মাস আগে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার সময়ঢ আমাকে অপহরণ করা হয়। ইয়েমেনের চারজন সহযোগী ছিলেন। অবর্ণনীয় দিন কেটেছে। প্রতিটি দিনে ছিল মৃত্যুর ভয়। ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তা কেবল সিনেমায় দেখা যায়।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসীরা তাদের পাহাড়ে ও মরুভূমিতে রেখেছিল। সারাক্ষণ আমার চোখ বাঁধা ছিল। সন্ত্রাসীরা ১৮ বার আমার স্থান পরিবর্তন করে। এ সময় তারা আমাকে ১০টি জায়গায় রেখেছিল। তবে ভাগ্য ভালো ছিল তারা নির্যাতন করেনি।”
অপহরণকারীদের টাকা শেষ হয়ে গেলে ভালোভাবে খাবার দিত না বলেও জানান সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
কেন অপহরণ করা হলো?
সন্ত্রাসীরা তাদের কেন অপহরণ করেছিল এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “ জাতিসংঘে কাজ করি বলে টার্গেট করেছিল বলে মনে হয়। তারা ভিডিও করেছিল তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু বলতে চাইছি না।”
সুফিউল আনাম বলেন, “ভেবেছিলাম, সবাই আমাকে ভুলে গেছে কিন্তু এনএসআইয়ের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মনে হলো আমাকে ভোলেননি তারা।”
উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান সুফিউল আনাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) কর্মকর্তাদের প্রতি।
তিনি বলেন, তাদের এই দায়িত্বপূর্ণতা ভুলব না। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে দেশের প্রয়োজনে চ্যালেঞ্জ নেবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় এনএসআইয়ের পরিচালক ইমরুল মাহমুদ বলেন, “স্যারকে উদ্ধার করার বিষয়টি ছিল দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দেড় বছরের চেষ্টায় এ সফলতা এসেছে। অপহরণকারীরা ৩০ লাখ মার্কিন ডলার চেয়েছিল, কিন্তু কোনো টাকাপয়সা দিতে হয়নি।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক বদরুল হাসান চৌধুরী ও উপপরিচালক বদরুল হাসান বিদ্যুৎ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে অপহরণের শিকার হন জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশের সাবেক সেনা কর্মকর্তা একেএম সুফিউল আনাম। এরপর থেকে কোনো খোঁজ মিলছিল না তাঁর। ধারণা করা হয় অপহরণের পর তাকে হত্যা করে জঙ্গিগোষ্ঠী। প্রায় সাত মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই কর্মকর্তার একটি ভিডিও প্রকাশ করে জঙ্গিগোষ্ঠীদের অনলাইন তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
জানা যায়, আল কায়েদার ইয়েমেন শাখা অপহরণ করে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুফিউলকে। আল কায়েদার দাবি দাওয়া মেনে নিজেকে মুক্ত করতে সুফিউল আকুতি জানান জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে। উল্লেখ করেন নিজের দুর্দশা ও শারীরিক দুরবস্থার কথা।
সুফিউল আনামকে মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর চিঠিও পাঠায় তার পরিবার।
১৯৭৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন একেএম সুফিউল আনাম। অবসরের পর ইয়েমেনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।