ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর জোরপূর্বক নগ্ন ভিডিও ধারণের অভিযোগে এক মেম্বারের ছেলেসহ ৬ যুবককে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার চুমুরদী ইউনিয়নের বাবলাতলা গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় মেম্বারের ছেলের মোবাইলে ধারণকৃত নগ্ন ভিডিওর ফুটেজ জব্দ করা হয়। অভিযুক্তদের পাশাপাশি ভুক্তভোগী তরুণীও বর্তমানে থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। খবর সমকাল।
শনিবার বিকেলে ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোকসেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সমকালকে তিনি জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী অভিযোগ দিয়েছেন। জড়িত ৬ যুবককে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ধর্ষণের দুটি ও পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। আটক যুবকদের পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাবলাতলা গ্রামের স্থানীয় আকরাম খাঁন নামের এক টিকটকার ও ভিডিও ক্রিয়েটর ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে (২০) একটি নতুন টিকটক ভিডিও তৈরির জন্য বোয়ালমারী উপজেলা থেকে ভাঙ্গায় ডেকে নেয়। এতে আকরামের সহযোগী ছিলেন মধুখালী উপজেলার জুয়েল মোল্লাসহ ও অজ্ঞাত আরও এক যুবক। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর উপজেলার ঘারুয়া গ্রামে জনৈক এক বাড়ির মালিকের বসতঘরে আটকে রেখে ওই তরুণীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রথম দফায় ধর্ষণ করে আকরাম হোসেন। এরপর সেখান থেকে ওই তরুণীকে আকরাম ও তার সহযোগী দুই যুবক গতকাল ৩ জানুয়ারি উপজেলার বাবলাতলা বাজার সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় ওঠে। সেই বাড়ির মালিককে আকরাম ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। এরপরও বিষয়টি স্থানীয়দের সন্দেহ হলে চুমুরদী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনারুদ্দিন ও তার ছেলে ছাইদুল মোল্লাসহ তাদের আরও ৫-৭ সহযোগীরা আকরামসহ ওই তরুণীকে বসতঘরে আটকে রাখে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বরাত দিয়ে পুলিশ আরও জানায়, রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ইউপি সদস্যের ছেলে ছাইদুলসহ তার সহযোগী ৫-৬ জন যুবক ওই তরুণী ও আকরামকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারপিট করে এবং বিভিন্ন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। একপর্যায়ে, ওই তরুণীর অশ্লীল ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল ও মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন ইউপি সদস্যের ছেলে ও তার সহযোগীরা। পরবর্তীতে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু টাকাও দেয় আকরাম ও তার সহযোগীরা। এরপর ভিডিওর ভয় দেখিয়ে আরও মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে সেখান থেকে চলে যায় ছাইদুল ও তার সহযোগীরা।
পুলিশ জানায়, ওই রাতেই ওই তরুণীকে দুই দফায় ধর্ষণ করে আকরাম ও তার সহযোগী জুয়েল মোল্লা। পরবর্তীতে এ ঘটনার বিষয়টি থানা পুলিশ জানতে পারলে গভীর রাতে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী ও তরুণীসহ ৬ যুবককে আটক করে পুলিশ।
এ বিষয়ে চুমুরদী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনারুদ্দিন মোল্লা জানায়, ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রথমে স্থানীয় শালিসের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তার ছেলের মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।