সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩, ০১:০৩ এএম
সরকার অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকালে এক ‘মহিলা সমাবেশে’ খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর একটি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রদানের প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আজকে আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, সর্বপ্রথম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিতসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
‘‘আমরা আশা করি তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে, তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার, এই অবৈধ সরকার অবৈধ হলেও তারা তাকে বাইরে চিকিতসার ব্যবস্থা করে দেবে।”
গত ৯ আগস্ট থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিতসাধীন আছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বিধানে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছে যে, দ্রুত তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে বিদেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি চিকিতসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট শামীম এস্কান্দার বোনকে বিদেশে চিকিতসার জন্য অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিতে আইন মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রে্খে, এখন গৃহবন্দি রেখে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর তাকে দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
একটি মাত্র কারণ যে, তারা(সরকার) জানে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি বাইরে থাকেন তাহলে জনগনের যে স্রোত করে তারা বন্ধ করতে পারবে না এবং তাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে ‘সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিতসার দাবিতে বিকালে এই ‘মহিলা সমাবেশ’ হয়। সারাদেশ থেকে মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেয়।
দেশের দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই সরকার চাল-ডাল-লবন প্রত্যেকটা জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে তা কমাতে এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, আজকেও পত্রিকায় আছে সরকার জিনিসপত্রের দাম বেধে দিয়েছে কিন্তু কেউ সেই দামের কথা মানছে না। আজকে তারা জোর করে আবার ক্ষমতায় থাকতে চায়। আপনারা কি সেটা দেবেন? মা-বোনদের কাছে জানতে চাই. ওদেরকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবেন নাকী।”
এই সময়ে মহিলা নেতা-কর্মী ‘না’ সূচক শ্লোগান দিতে থাকে।
এই সরকারের আমলে গণতন্ত্রের জন্য মিছিল মিটিং অংশ নিতে গিয়ে মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নারীদের কারগারে পাঠানোর বিভিন্ন ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।
‘‘ এরা একটি অত্যাচারি সরকার। এই সরকারের হাতে মানুষের নিরাপত্তা নাই, গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তা নাই, শিশুদের নিরাপত্তা নাই।”
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ এই আওয়ামী লীগ তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এতো বেশি অহংকারি হয়ে উঠেছেন, এতোবেশি প্রতিহিংসা পরায়ন হয়েছে যে, দেশের মানুষের অবস্থা চিন্তা করছেন না। সেই কারণে আজকে এককভাবে সমগ্র দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো বলছে যে আমরা একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।তখন সেটা তিনি উড়িয়ে দিয়ে আবারো সেই পুরনো কথা সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হবে। এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না।”
‘‘ কারণ আপনারা ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিনই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারবে না। আমার মা-বোনের ভোট দিতে পারে না। গত দুইটি নির্বাচনে ভোট দিতে তারা(মা-বোনেরা) পারেননি, তাদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে মহিলাসহ কোনো মানুষেরই কোনো নিরাপত্তা থাকবে না, আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে হারাবো, আমাদের সার্বভৌমত্বকে হারাব, আমাদের গণতন্ত্র চিরতরে চলে যাবে, আমাদের কোনো অধিকার আর থাকবে না।”
‘‘তাই আসুন আগামী দিনগুলোতে আমরা নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐক্য গড়ে তুলি, সেই ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে, সংসদ বিলুপ্ত করতে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে নতুন নির্বাচন দিতে। সেখানেই এই রাজনৈতিক সমাধানে একমাত্র পথ।”
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খানম রীতা, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের নাজমুন নাহার বেবী, নেওয়াজ হালিমা আরলি, ইয়াসমীন আরা হক, হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, অর্পনা রায় দাশ, শাহানা আখতার শানু, নায়েবা ইউসুফ, রুমা আখতারসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে আসা নেতৃ্বৃন্দ। বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম প্রমূখ নেতৃ্বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।