গ্যাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৩, ২০২৪, ১২:৩৬ পিএম

গ্যাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীতে অবৈধভাবে শিল্পকারখানায় গ্যাস বিক্রি বন্ধসহ সাধারণ যানবাহনে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে যানবাহনের শ্রমিকরা।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে নরসিংদীর রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী মাইক্রোবাস চালাক ও সিএনজিচালিত যানবাহনের চালকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহেপ্রতাব মোড়ে অবরোধ করে। এতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যানচলাচল স্বাভাবিক করে। শ্রমিকদের অভিযোগ, নরসিংদী তিতাস গ্যাস অফিসের কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধার নিয়ে সিএনজি পাম্পগুলোকে এই অবৈধ সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদীর সিএনজি পাম্পগুলো অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় প্রাইভেট যানবাহনে গ্যাস না দিয়ে শিল্প কারখানার বড় বড় কনটেনারে গ্যাস দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, যাত্রীবাহী বাসসহ সকল প্রকার যানবাহন গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস পেলেও গ্যাসের চাপ পাচ্ছে না। ফলে তারা যাত্রী বা রোগী নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আবার মাঝ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যানচলাচল স্বাভাবিক করেন।

শ্রমিকরা আরও জানান, তিতাস গ্যাস অফিসের কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকা ঘুষ খেয়ে সিএনজি পাম্পগুলোকে এই অবৈধ সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, কনটেইনার ও কাভার্ডভ্যানের ভেতরে প্রচুর সিলিন্ডার ভর্তি করে গ্যাস নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, মুন্সিগঞ্জসহ দূরদূরান্তের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় যাচ্ছে। এটি সিএনজি স্টেশন মালিক ও তিতাস কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এতে গ্যাসের চাপ কমে যায়। মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও গ্যাস পায় না। এ কারণে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।

সেবাসংঘ মাইক্রোস্টেন্ডের সাধারণ সম্পাদক লিটন মিয়া বলেন, “নরসিংদীর প্রত্যেকটা সিএনজি পাম্পে অবৈধভাবে শিল্পকারখানার কনটেইনারে গ্যাস দিচ্ছে। একটি কনটেইনারে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার গ্যাস দিচ্ছে। আমরা গ্যাস নিতে গেলে আমাদের গ্যাস দিচ্ছে না। আর গ্যাস দিলেও গ্যাসের চাপ থাকে না। ফলে আমরা যাত্রী বা মুমূর্ষু রোগী নিয়ে হাসপাতাল বা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের মূলত দুটি দাবি। এর মধ্যে প্রধান দাবি শিল্পকারখানার কনটেইনারে গ্যাস দেয়া বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ যানবাহনে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।”

আরশিনগর মাইক্রোস্টেন্ডের সভাপতি মো. আইয়ুব বলেন, “আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। নরসিংদী পাম্পগুলো থেকে গ্যাস নিতে আমরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার। একজন জরুরি রোগী নিয়ে ঢাকা যেতে চাইলে ১৫০ টাকার গ্যাস পাই। অথচ আমার গাড়িতে গ্যাস নেয়া যায় ১২০০ টাকার। ফলে আমি রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে পৌঁছাতে পারি না। ফলে রাস্তার মধ্যেই হয়রানি হতে হয়। কখনো কখনো রোগী রাস্তাতেই মারা যায়।”  

তিনি আরও বলেন, “শিল্পকারখানার গ্যাস লাইন আছে। সেখানে তাদের বকেয়া আছে। তারা বিল পরিশোধ করে না। গাড়ির জন্য স্থাপিত সিএনজি পাম্পগুলো থেকে তারা অল্পদামে গ্যাস নিয়ে কারখানা চালায়। ফলে সড়কের হাজার হাজার যানবাহন গ্যাস পাচ্ছে না। ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের।”

নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শহিদুল হকে সোহাগ বলেন, গ্যাসের দাবিতে ভাড়ায় চালিত যানবাহনের চালকরা সড়ক অবরোধ করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সড়ক ক্লিয়ার করার ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রায় ২ ঘণ্টার অধিক সময় পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নরসিংদী তিতাস গ্যাস এর ডি জি এম মামুনুর রহমান বলেন, “সিএনজি পাম্পগুলো থেকে কারখানায় গ্যাস দেয়ার বিধান আছে কিনা বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। আমরা আইনগুলো খতিয়ে দেখছি। কতিপয় তিতাস কর্মকর্তার যোগসাজসে নরসিংদীর সিএনজি পাম্পগুলো থেকে অবৈধভাবে কারখানায় গ্যাস দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব গুলো বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। তার পর সব কিছু বলা যাবে।”

Link copied!