নভেম্বর ১৬, ২০২৩, ০৫:৩৪ পিএম
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের হাতে বেশ কিছু ক্ষমতা থাকে। সাংবিধানিকভাবে তারা প্রশাসন রদবদল থেকে শুরু করে প্রার্থিতা বাতিলও করতে পারে। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো নির্বাচন কমিশনই ক্ষমতাসীনদের অসন্তোষ সৃষ্টি করেনি। এমনকি সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের রদবদলের নির্দেশনাও মানা হয়নি।
তফসিলের পর যে ক্ষমতা থাকে কমিশনের:
নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান এবং আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। পর্যবেক্ষকরা বলছেন এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিশ্চিত করা আছে।
শুধু তাই নয় আদালতকে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার বিধান রয়েছে। ১২৫ নং অনুচ্ছেদের (গ) তে বলা হয়েছে ; কোন আদালত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হইয়াছে এইরূপ কোন নির্বাচনের বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসংগত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করিয়া, অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনরূপে কোন আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিবেন না।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে নির্বাচন কমিশন এমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি যাতে ক্ষমতাসীনরা অসন্তুষ্ট হতে পারে। কয়েকটি ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটেছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তা বদলির বাস্তবতা:
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বদলি করার প্রয়োজন হলে করলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব সে বদলি কার্যকর করতে হবে।
তবে এই বিষয়গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয় বলে জানান সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী যদি সরকার কাজ না করে তাহলে আইনের বরখেলাপ হবে। তবে সরকার সবসময় তাদের পছন্দমতো কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের চাহিদা উপেক্ষা করা কিংবা তাদের সাথে আলোচনা না করেই নিয়োগ করে দেয়।
উপেক্ষিত নির্বাচন কমিশন:
২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে সে জেলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়াই তাকে আবারও গাজীপুরে পুনর্বহাল করা হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।
যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, তিনি নির্বাচনের পরেই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশন সশস্ত্র বাাহিনী বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য। কিন্তু সেটি করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।
কখনোই ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন:
নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কোন কর্মকর্তাকে বদলি করা কিংবা না করা হলে সেক্ষেত্রে কমিশন বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়নি। ভারতের নির্বাচন কমিশন মামলা থেকে শুরু করে আদালতের শরণাপন্ন হলেও বাংলাদেশে এমন নজির নেই।
ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, বাংলাদেশে কখনোই কোন নির্বাচন কমিশন আদালতে যায়নি। এমনকি অনেক ধরনের নীতিমালা ভঙ্গ করলেও সে ব্যবস্থা নেয়নি কোন কমিশন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের কেউ থাকলে।
এমনকি ২০১৬ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ব্যালট পেপারে সিল মেরে গণমাধ্যমকে দেখায়। নির্বাচনী নীতিমালা বহির্ভূত এই কর্মকাণ্ডের পরও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন কমিশন।
প্রার্থিতা বাতিল:
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি কোন প্রার্থী নির্বাচনী আইন ও আচরণ বিধির গুরুতর লঙ্ঘন করেন, সেক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন উদাহরণ নেই।
নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা ও সতর্ক করার নজির থাকলেও প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি দেখা যায় না।
রিটার্নিং অফিসারকে নিয়ন্ত্রণ করা:
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে উল্লেখ করা আছে, একজন রিটার্নিং অফিসারকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে দায়িত্ব দেবে, তিনি সে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকবেন।
এদিকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করলেও নির্দেশনা মেনে না চলেন সেক্ষেত্রে তাদের নিয়োগ বাতিল করতে পারে কমিশন। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও বাতিল করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি বাতিল করতে পারে।
তফসিলের পর বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন:
১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরপরই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এক নির্দেশনায় ইসি জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পদত্যাগ করতে হবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের।
এছাড়াও গণমাধ্যমকর্মীদের নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে।