কুমিল্লায় শহীদ মিনার ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকারের ম্যুরাল ভাঙচুর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৬, ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম

কুমিল্লায় শহীদ মিনার ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকারের ম্যুরাল ভাঙচুর

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ লাগোয়া একটি শহীদ মিনার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে ঠিক কবে এসব ভাঙচুর করা হয়েছে, তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। গতকাল বুধবার ভাঙা ম্যুরাল ও শহীদ মিনারের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, কয়েক মাস ধরেই ম্যুরাল ও শহীদ মিনার ভাঙা দেখছেন তারা।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার সংস্কার ও ম্যুরালটি আবার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ কমান্ডার শফিউল আহমেদ বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে এবং দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা কখনো এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে না। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার এবং ম্যুরালটি আবারও পুনর্নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কুমিল্লার অহংকার। বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান অসীম। যারা এই নিকৃষ্ট কাজটি করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ রাজবাড়ি কম্পাউন্ড এলাকায় এটির কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি লাগোয়া একটি শহীদ মিনার ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। যেখানে ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে, সেটির পাশেই বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি। কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন শহীদ মিনারে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ মিনারটির মধ্যখানে লাল সূর্য থাকলেও তিনটি স্তম্ভের একটিও নেই। পাশের ম্যুরালটি ভাঙা। কাচের ওপর ম্যুরালটি তৈরি করা হয়েছিল। খবর প্রথম আলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন কর্মচারী বলেন, কয়েক মাস ধরে এগুলো ভাঙা। ম্যুরালটি ৫ আগস্টপরবর্তী সময়ে ভাঙা বলে মনে হচ্ছে। আর শহীদ মিনারটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে কয়েক মাস আগে। তাদের ধারণা, মাদকাসক্ত ছিন্নমূলেরা স্তম্ভগুলো ভেঙে নিয়ে গেছেন। স্তম্ভগুলো লোহা ও স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক মাস ধরেই প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য দেখছেন। তবে গত বুধবার বিকেলে ম্যুরাল ও শহীদ মিনারের ভাঙা ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষাশহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রফিক তার সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান এবং অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনের আদায়ের চেষ্টা শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে পালিত হচ্ছে। এ গৌরবময় অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর কানাডার একটি হাসপাতালে মারা যান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল এবং পাশে থাকা শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তবে কখন বা কারা এগুলো ভেঙেছে, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এগুলো আবারও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া কারা এ ঘটনায় জড়িত, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।

Link copied!