ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ০১:২১ পিএম
সচিবালয়ে ঢুকতে শিগগিরই নতুন করে আবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
গত বুধবার সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) হিসেবে এর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিবেচনায় সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বার্তায়। খবর বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম।
শনিবার ওই বার্তায় বলা হয়, “চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তথা কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিবেচনায় অন্যান্য সকল বেসরকারি পাসের পাশাপাশি বর্তমান অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশও সীমিত করা হয়েছে। সরকার শীঘ্রই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলি পর্যালোচনা করবে এবং নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) মাধ্যমে সকল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে নতুন অ্যাক্রিডিটেশনের আবেদন আহ্বান করবে।
“এই সময়ে, যেকোনো ইভেন্টের জন্য সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত অস্থায়ী অ্যাক্সেস কার্ড পাবেন। সাংবাদিকদের সাময়িক এই অসুবিধার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে।”
সচিবালয়ে বুধবারের বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়ের ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ সাংবাদিকদের সব ধরনের অস্থায়ী প্রবেশ পাস বাতিলের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য ইস্যু করা অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হল।”
এতে আরো বলা হয়, “নিরাপত্তা বাড়ানোর স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যু করা স্থায়ী প্রবেশ পাস (ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম) এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যু করা অস্থায়ী পাস ছাড়া বাকি সব অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের জন্য) পাস বাতিল করা হল।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যাদের পাস বাতিল হয়েছে, তারা ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টারের বিশেষ সেলের মাধ্যমে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের আবেদন করতে পারবেন।
এদিকে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
শনিবার সকালে ফেইসবুকে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার লিখেছেন, “কিছু লোক সরকারকে কঠোর হতে বলে আবার সামান্যতম কঠোর হলে গেল গেল রব তোলে। এই দ্বিচারিতা বন্ধ হওয়া জরুরি। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা নিয়ে যথারীতি এই দ্বিচারিতা আবার শুরু হয়েছে। প্রবেশাধিকার সীমিত করার এই সিদ্ধান্তটি খুবই সাময়িক।
“একটা বিষয় এখানে পরিষ্কার করা দরকার, কোনো সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাতিল করা হয়নি। কেবল সচিবালয়ের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। তাও খুবই অল্প সময়ের জন্য। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অস্থায়ী পাশ ইস্যু করা হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীঘ্রই বিদ্যমান সব প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডই পর্যালোচনা করা হবে এবং নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য সমস্ত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে আবেদন চাওয়া হবে।”
সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেছেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী বলেই এই ধরনের কমিটি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের দূরে রেখে তদন্ত কাজ চালানো হবে বলে যারা আবোল তাবোল বকছেন এরা মারাত্মক ভুলে আছেন। আমাদের বিশ্বাস, সাংবাদিকরাও বিষয়টি উপলব্ধি করবেন এবং চলমান পরিস্থিতিতে সরকারকে সহযোগতিা করবেন।”
পরে ফেইসবুকে পোস্ট দেন সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
তিনি লিখেছেন, “খুব শিগগিরই পেশাদার সাংবাদিকরা তাদের প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে পাবেন নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড। তবে এরমধ্যে নিশ্চয়ই সাংবাদিকতা থেমে থাকবে না, সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ থেমে থাকবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক পাস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন সাংবাদিকরা।”
গত বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার ১০ ঘণ্টা পর তা নেভানো সম্ভব হয় ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায়।
দশ তলা ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।