ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪, ০৩:৩৮ পিএম
মিয়ানমার সীমান্তে আগের যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তেমন পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, `আমাদের দেশে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। প্রতি বছর ৩৫ হাজার নতুন রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করে অর্থাৎ প্রতি বছর এই সংখ্যাটা বাড়ছে। আমাদের পক্ষে আর কোনো রোহিঙ্গাকে গ্রহণ কিংবা আশ্রয় দেওয়া সম্ভবপর নয়। মিয়ানমার সীমান্তে এর আগে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, আশা করব সেই ধরনের পরিস্থিতির আর হবে না।`
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি শিরিষ তলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত অমর একুশে বই মেলায় `মহান একুশে চসিক স্মারক সম্মাননা পদক` প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে তারা আবারও অভিযান চালাবে, অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে, সরকার এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘আপনারা জানেন কয়েকদিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিউনিখে সিকিউরিটি কনফারেন্সে গিয়েছিলেন। সেখানেও আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের যেই প্রতিনিধি দল আসছে, এটি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীরতর করার ক্ষেত্রে সহায়ক। সেখানে নিশ্চিতভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা আলোচনা করব।’
তিনি বলেন, ‘রাখাইনে অভিযান পরিচালনা করাটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু সেটির কারণে আমাদের এখানে উত্তেজনা এর আগে তৈরি হয়েছে, এবং সেখানকার মর্টার শেল আমাদের দেশে এসে পড়েছে, দুইজন নিহতও হয়েছে। ৩৩০ জনের মতো তাদের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আমাদের দেশে এসেছিল, আবার তাদের ফেরত নিয়ে গেছে। মায়ানমারের রাষ্ট্রদুতকে ডেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেটির প্রতিবাদ আমরা জানিয়েছি। সুতরাং আমরা আশা করব এর আগে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা আর হবে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের এর আগে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাদের কীভাবে ফেরত পাঠানো যায় আমরা সে নিয়েই কাজ করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সমস্ত রাষ্ট্রসমূহের সহায়তা কামনা করেছি, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সরকারের ওপর যাতে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়, সেজন্য ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি।’
বই মেলায় ড. হাছান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করার পর ছাত্রলীগ প্রথম যে ১০ দফা দেয়, তার অন্যতম ছিল- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। সেই দশ দফার ভিত্তিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তরুণ নেতা শেখ মুজিবসহ ছাত্র নেতারা জেলায় জেলায় সফর করেছিলেন। এই অনুম্মোচিত ইতিহাসগুলো আজকে ধীরে ধীরে উম্মোচিত হচ্ছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালি জাতির মুক্তি নিহিত নেই।’
এ সময় চট্টগ্রাম বইমেলাকে আন্তর্জাতিকীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঢাকা ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, আগরতলা, আসামসহ তাদের গুণীজন এবং প্রকাশকদের এখানে আনতে হবে, তখন এই মেলার আন্তর্জাতিকীকরণ হবে। দুই বাংলার মানুষ আমরা একই ভাষায় কথা বলি, একই সংস্কৃতি লালন করি, একই পাখির কলতানে বড় হই, একই নদীর অববাহিকায় বসবাস করি। রাজনৈতিক সীমারেখা অতিক্রম করে আমাদের মানুষে মানুষে নৈকট্য বাড়ানো প্রয়োজন। তার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ২০২৪ একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শিল্প উন্নয়ন ও সমাজসেবায় মো. নাছির উদ্দিন (মরণোত্তর), চিকিৎসায় প্রফেসর ডা. মো. গোফরানুল হক, নাট্যকলায় শিশির দত্ত, সংস্কৃতিতে শ্রেয়সী রায়, শিক্ষায় প্রফেসর প্রদীপ ভট্টাচার্য, সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ, সাংবাদিকতায় জসীম চৌধুরী সবুজ, ক্রীড়ায় জাকির হোসেন লুলু, স্বল্পদের্ঘ্য চলচিত্র নির্মাণ ও গবেষণায় শৈবাল চৌধুরী, লোকসাহিত্য ও গবেষণায় শামসুল আরেফীন, প্রবন্ধে শামসুদ্দিন শিশির, কবিতায় আবসার হাবীব ও ভাগ্যধন বড়ুয়া, শিশু সাহিত্যে ছড়াকার অরুণ শীল ও শিবু কান্তি দাশ এবং প্রতিনিধিদের হাতে মন্ত্রী সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বইমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নাট্যকলায় সম্মাননাপ্রাপ্ত শিশির দত্ত, কবিতায় সম্মাননাপ্রাপ্ত আবসার হাবীব প্রমুখ।