সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের ৪ আগস্ট সরকার পতনের পূর্বেই অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নতুন সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, গত বছর ৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে সকল রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবি জানাই এবং অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়। আমরা আরও দাবি জানাই যে, কোনো ধরনের সেনাশাসন বা সেনা সমর্থিত শাসন আমরা মেনে নেব না।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সুপেরিয়ার রেসপন্সিবিলিটি হিসেবে দায়ের করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষীর শেষ দিনে এসব কথা বলেন তিনি। সকাল সোয়া ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, পুরো আন্দোলন জুড়ে পুলিশ ও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় ও নির্যাতন করে।
এনসিপির আহ্বায়ক উল্লেখ করেন, এই সকল হত্যাকাণ্ড নৃশংস ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ ও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান যারা ছিলেন তাদের দায়ী করছি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এইসব হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। তারা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত ও নিরঙ্কুশ করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নাহিদ বলেন, পরবর্তীতে আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আন্দোলনকারীদের উপর শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার ও নেথাল ওয়েপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে তিনি প্রার্থনা জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।
জবানবন্দির একপর্যায়ে এনসিপির এই আহ্বায়ক বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ করি। ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করি। তবে সেদিন কারফিউ ঘোষণা করে দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় সরকার। আমরা জানতে পারি ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। এজন্য আমরা মার্চ ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।
তিনি বলেন, আমরা ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিঁয়াজো করছিলেন মাহফুজ আলম। আমরা নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করি। তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
এর আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নাহিদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তবে শেষ না হওয়ায় আজ পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।