রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে কড়া বার্তা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। বলেছেন, তার মতো মানুষের বিরুদ্ধে কি করা দরকার, কি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তার জায়গা কোথায় হওয়া দরকার, তা নতুন করে নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ।
সোমবার রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, পাঁচ আগস্টের পর আমরা হয়তো ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারিনি। সে অর্থে বিপ্লবী সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন করতে পারিনি। যে কারণে চুপ্পুর মতো মানুষ এখনও প্রেসিডেন্টের মতো পদে বসে আছে। তার মতো মানুষ, আজকে তিনি বলছেন, শেখ হাসিনার রিজাইন পেপার নাকি তিনি দেখেননি। কোন সাহসে তিনি এ কথা বলতে পারেন?
এই সমন্বয়ক বলেন, শেখ হাসিনার রিজাইন পেপার যদি তিনি নিজের না দেখেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কি করা দরকার, কি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তার জায়গা কোথায় হওয়া দরকার, সেটা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ নতুন করে নির্ধারণ করবে।
সারজিস বলেন, যারা দেখেও অনেক কিছু না দেখার ভান করছেন, তাদের আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, হাইকোর্ট, সচিবালয়সহ বিভিন্ন অফিস থেকে অনেকে অনেক কিছু নতুন করে চিন্তা করছিল। বাংলাদেশকে নাকি ব্লাকআউট করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি ও স্পষ্ট করে বলি, আমাদের মধ্যে ছোট ছোট মনোমালিন্য বা বিভাজন থাকতে পারে কিন্তু আবার যদি পুরো দেশের স্বার্থ সামনে আসে তাহলে আমার যেসব ভাই হাসপাতালে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে, হাত হারিয়েছে, চোখের আলো হারিয়েছে তারা আবারও জীবন দিতে রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত আছে।
‘সুতরাং হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম বা ঢাকার গুলিস্তান বলি, বিন্দুমাত্র কেউ যদি আজকের পর থেকে ওই খুনিদের পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামবে,’ যোগ করেন তিনি।
কিছু ব্যক্তিত্বহীন বিবেক বোধহীন মানুষ এখন গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বলছেন-মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার যখন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তখন তাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা কোথায় ছিল। বিগত তিনটি নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ কোনো ভোট দিতে পারেননি।
‘যখন প্রত্যেকদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ধ্বংস করার ছক কষা হয়েছে, যখন বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভূমিমন্ত্রী নাকি কানাডায় ৩৬০টি কিনেছেন, তার শরীরের প্রত্যেকটি হাড়কে যদি প্রত্যেকটি বাড়িতে কবর হিসেবেও রাখা হয় তবুও তার মৃত্যুর পর ৩৬০টি বাড়ির প্রয়োজন নেই। এই যে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে, যা পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণকেও ছাড়িয়ে যায়, তখন সেই ব্যক্তিত্বহীন মেরুদণ্ডহীন লোকগুলো কোথায় ছিলেন।’
এই সমন্বয়ক আরও বলেন, বিগত ১৬ বছরে এই বাংলাদেশে দাড়ি-টুপি দেখে যখন তখন যে কাউকে জামায়াত-শিবির বলে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। গঠনমূলক সমালোচনা দেখে বিভিন্নজনকে গুম খুন করা হয়েছে। তখন তাদের এই ডেমোক্রেটিক রাইটসগুলো কোথায় ছিল। তাদের বলতে হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়ার কারণে পীর সাহেব চরমোনাইকে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখন ডেমোক্রেটিক রাইটস কোথায় ছিল তাদের।
‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে, আওয়ামী লীগের মতো একটি ফ্যাসিস্ট দল একটার পর একটা নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ভোট দিতে দেয়নি। জাতীয় পার্টির মতো দালাল মেরুদণ্ডহীন বিবেক বোধহীন দল ওইসব নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার অবৈধ চেষ্টা করেছে। তখন তাদের বিবেকবোধ কোথায় ছিল।’
আরও পড়ুন: ‘রাষ্ট্রপতির বক্তব্য মিথ্যাচার ও শপথ লঙ্ঘনের শামিল’
সারজিস বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল যখন এক হলো তখন ভণ্ড নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা ৫ আগস্টের পূর্বে গণভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের রাজাকার, পাকিস্তানি প্রেতাত্মা বলে অভিহিত করেছিল। আমার দুই হাজার ভাই বোনের জীবন কেড়ে নেওয়ার জন্য, ৫০ হাজার ভাই-বোনকে রক্তাক্ত করার জন্য পেছনে-সামনে থেকে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি পালন করেছিল তারা। তাদের সঙ্গে এক টেবিলে কোনো দিন বৈঠক হতে পারে না।
ফ্যাসিস্টের মাথাটি সরেছে, ফ্যাসিস্ট সিস্টেম রয়ে গেছে উল্লেখ করে এই সমন্বয়ক বলেন, ওই মাথাটি এমন একটি জায়গায় আছে, সেই জায়গা থেকে এই মাথাটি কোনো এজেন্সি বা দেশের মাধ্যমে হোক কুচক্র বা বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করছে আমাদের মধ্যে বিভাজন করার জন্য। আমাদের মতামত বা রাজনীতি মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে, কর্মপরিকল্পনা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু একটি প্রশ্নে আমাদের এক হতে হবে, যখন এই ফ্যাসিস্টরা কোনো ধরনের অপচেষ্টা বা বাংলাদেশে নোংরা রাজনীতির চেষ্টা করে তখন নামতে হবে। সবাইকে নামতে হবে। পাঁচ মিনিটের নোটিশে হলেও নামতে হবে।