সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩, ০৫:০৩ এএম
নাবিকরা আমাদের নৌ-বাণিজ্যের প্রাণ মন্তব্য করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে সমুদ্র খাতের ভিত্তি রচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নাবিকরা বিশ্বের সমুদ্রজুড়ে পণ্যের নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিশ্চিত করে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি চালায়। শিল্পের স্টেকহোল্ডার হিসেবে সামনের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলোর জন্য আমাদের নাবিকদের তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটি, সিঙ্গাপুর (বিএমসিএস) আয়োজিত ‘নেভিগেটিং সিফেয়ারার শর্টেজ বাংলাদেশ’স প্রসপেক্ট ইন মেরিটাইম এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এ টেকসই উন্নয়নে নৌ ও নৌপরিবহন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে স্বীকৃত। ক্রমবর্ধমান জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজের জন্য বাংলাদেশি নাবিকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
নাবিকরা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন জানিয়ে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির জন্য বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করছেন নাবিকরা। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা আমাদের লক্ষ্য। নৌ খাতে লিঙ্গসমতা উন্নীত করার জন্য আমরা ২০১২ সালে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে মহিলা ক্যাডেটদের অন্তর্ভুক্তি শুরু করেছিলাম। আমাদের সরকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন যেমন স্ট্যান্ডার্ড ট্রেনিং সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচকিপিং (এসটিপিডব্লিউ) কনভেনশন এবং এমএলসি ২০০৬ মেনে চলছে। দক্ষ নাবিকদের ক্রমবর্ধমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে আমরা চারটি নতুন মেরিন একাডেমি এবং একটি নাবিক ক্রু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের নবম মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিও প্রতিষ্ঠা করেছি। আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিতে এমনকি জাতিসংঘের সংস্থাগুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশি মেরিনাররা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বায়ত্তশাসিত জাহাজ ও শূন্য কার্বন জ্বালানি প্রবর্তনের মাধ্যমে সামুদ্রিক শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। আমরা মেরিন একাডেমিতে ই-লার্নিং ভিত্তিক মেরিটাইম এডুকেশন এবং সিমুলেটর ভিত্তিক প্রশিক্ষণ চালু করার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি। এই প্রযুক্তিগত একত্রীকরণ নৌ খাতে দক্ষতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াবে। ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের সামুদ্রিক শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীতে নিয়ে যেতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সেমিনারে বাংলাদেশের মেরিটাইম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সম্ভাবনা, জাহাজে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশের মেরিনার নিয়োগ ও নতুন কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হয়।
বাংলাদেশি নাবিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো এবং মেরিটাইম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান বাড়াতে এ ধরনের সেমিনারে আয়োজন করায় প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটি সিঙ্গাপুরকে (বিএমসিএস) ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম এমপ্লয়ারস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন বেলাল আহমেদ। অনলাইনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের কমান্ডেন্ট ড. সাজিদ হোসেন।
বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট সারোয়ার দিতোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন।
সেমিনারে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন জাহাজের মালিক জাহাজের ব্যবস্থাপক, মেরিন ক্যাডেট ও নাবিক নিয়োগকারী বাংলাদেশি বিভিন্ন এজেন্সি, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সিঙ্গাপুর মেরিটাইম অফিসার্স ইউনিয়ন, সিঙ্গাপুর শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন মেরিন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।