চাচাতো বোনকে গোপনে বিয়ে করে খুন সৌরভ, গ্রেপ্তার ৩

জাতীয় ডেস্ক

জুন ৪, ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম

চাচাতো বোনকে গোপনে বিয়ে করে খুন সৌরভ, গ্রেপ্তার ৩

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের মনতলা ব্রিজের নিচ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভের (২৩) লাগেজে পাওয়া খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাচা ইলিয়াস উদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সৌরভের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামে। তার বাবার নাম ইউসুফ আলী। সৌরভ গুলশানের বেসরকারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকার মতিঝিলে বসবাস করেন।

ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, “তিন বছর আগে সৌরভের চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভার বিয়ে হয় আব্রাহাম নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছেন। তার সঙ্গে ডিভোর্সও হয়নি। সম্প্রতি সৌরভ গোপনে তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন। এই বিষয়টি ইভার পরিবার ভালোভাবে নেয়নি। গত ১ জুন সৌরভ ময়মনসিংহে আসেন। এরপর গোয়ালকান্দিতে চাচার বাসায় মাথায় আঘাত করে সৌরভকে হত্যা করা হয়। পরে চাপাতি দিয়ে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে।”

পুলিশ সুপার আরও বলেন, “গত ২ জুন সকালে ময়মনসিংহ সদরের মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে সৌরভের চার টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কালো রঙের একটি ট্রলিব্যাগ থেকে তিন টুকরো এবং পাশেই একটি বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাথা উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ৩ জুন রাতে গ্রামের বাড়িতে ওমর ফারুকের মরদেহ দাফন করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইউসুফ আলী বাদী হয়ে ২ জুন রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।”

সৌরভের পারিবারের সদস্যরা জানান, সৌরভের ও তার চাচাতো বোনের দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। তারা পরিবারকে না জানিয়ে ১২ মে ঢাকার একটি বাসায় বিয়ে করেন। এরপর ইভা ময়মনসিংহের নিজ বাসায় চলে যান। বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হতেই উভয় পরিবারের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ১৬ মে ইভাকে জোর করে কানাডা পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। এর মধ্যেই ইভার বাবা ইলিয়াস আলী সৌরভের বাবাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন। ইভা ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে।

এ বিষয়ে সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি, সেই আমার সন্তানকে হত্যা করল। আমার সন্তানকে না মেরে আমাকে মারত। তার কী এমন দোষ ছিল? শুধু কি আমার ছেলেই তোর (ইলিয়াস) মেয়েকে ভালোবেসেছে? তোর মেয়ে কি ভালোবাসে নাই? যদি তোর মেয়ে ভালো নাই বাসত, তাহলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় গিয়ে কেন আমার ছেলেকে বিয়ে করল? সৌরভের বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে আমার ছোট ভাই আমাকে নানা হুমকি দিয়েছে। এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সবার ফাঁসি চাই।”

সৌরভের মা মাহমুদা আক্তার বলেন, “ভালোবেসে চাচাতো বোনকে বিয়ে করাই আমার ছেলের কাল হয়েছে। আমরা কোনোদিন ভাবিনি, আপন চাচা তার ভাতিজাকে এভাবে হত্যা করবে। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আমার সাজানো সংসার ছিল। ইলিয়াস সবকিছু এলোমেলো করে দিল।”

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন বলেন, “এ ঘটনায় চাচা ইলিয়াস উদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” 

Link copied!