‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’ দ্বারা অপহৃত আট বাংলাদেশি ফেরত এসেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ায় পাহাড়ি এলাকায় মাছ ধরতে গেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করে।
অপহৃত হওয়ার চারদিন পর বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) ভোর ৩টায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন অপহৃতরা। এরপর ভোর ৪টায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে টেকনাফ মডেল থানায় নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন,‘অপহরণ হওয়ার পর থেকে আমরা কয়েকটি পাহাড়ে ড্রোন উড়িয়ে অপহরণকারীদের শনাক্তসহ উদ্ধারে চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। চাপে পড়ে অপহরণকারীরা তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। ফেরত আসা অপহৃতদের চিকিৎসা শেষে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর পেছনে যারাই জড়িত থাকুক কেউ রেহাই পাবে না।’
ফেরত আসা অপহৃতরা হলেন, জাহাজপুরা এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহামদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল, মমতাজ মিয়ার ছেলে মো. রিদুয়ান, রুস্তম আলীর ছেলে সেলিম উল্লাহ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে করিম উল্লাহ, কাদের হোসনের ছেলে নুরুল হক ও নুর মোহাম্মদ এবং রশিদ আহমদের ছেলে আবছার।
বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফ থানা প্রাঙ্গণে এক অপহৃতের ভাই মো. উল্লাহ বলেন, ‘অপহরণকারীরা চারদিন পর আমার ভাইসহ আটজনকে ছেড়ে দিয়েছে। রাত ৩টায় আমরা তাদের জাহাজপুরা বনিছড়া খাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করি। তাদের সবাইকে নির্মমভাবে মারধর করেছে অপহরণকারীরা। আর একদিন হলে হয়তো আমার ভাই মারা যেত। আমার ভাইসহ সবাইকে থানায় নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।’
ফেরত আসা ভাইয়ের বরাত দিয়ে মো. উল্লাহ বলেন, ‘পুলিশের অভিযানের মুখে সন্ত্রাসীরা তাদের সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে। বুধবার পাহাড়ে অভিযানের সময় তারা (অপহৃতরা) পুলিশের দলকে দেখতে পায়। কিন্তু মুখে কাপড় বাঁধা থাকার কারণে চিৎকার করতে পারেনি। তবে অভিযানিক দলকে দেখে অপহরণকারী তাদের অস্ত্র তাক করেছিল। আর একটু সামনে এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের সবাইকে মেরে হয়তো পালিয়ে যেত।’ গত চারদিন তার ভাইকে অত্যাচারের কথাও বর্ণনা দেন তিনি।
মো. রিদুয়ানের বাবা মমতাজ মিয়া বলেন, ‘রাত তিনটায় ছেলে ফিরে এসেছে। কিন্তু তার শরীরে ব্যাপক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভোরে পুলিশ এসে ছেলেকে নিয়ে গেছে। আমরা সবাই অনেক খুশি তাদের ফিরে পেয়ে।’
বাহারছড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ অপহৃত আটজন ফিরে এসেছে। হয়তো পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চাপের মুখে ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা’ তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এর আগে অপহরণের পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে তারা।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে টেকনাফের বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকার একটি পাহাড়ঘেঁষা খালে মাছ ধরতে গেলে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের একটি দল ওই ৮ জনকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে। সে সময় স্বজনরা ৬ লাখ টাকা দিয়ে তাদের ছেড়ে আনতে তৎপরতাও চালিয়েছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়ে ড্রোনসহ চিরুনি অভিযান শুরু করে।