মে ৩১, ২০২৩, ০৫:২৮ পিএম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ অন্য দেশগুলোয় স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
গত ৩০ মে জনস্বার্থে বাদী হয়ে এই রিট করেছেন অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান। বুধবার তিনি নিজেই গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্টের এই আইনজীবী জানান, রিটে অর্থ সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি। পৃথিবীর যেকোনও দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনও দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সামরিক শক্তি বা নিষেধাজ্ঞা উভয়ই প্রয়োগ করে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি ব্যবহার করে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ভিয়েতনামসহ বহু দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করেছে।’
রিট আবেদনে আরও বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে ইরান, রাশিয়া, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ইরাক, সুদান, ভেনেজুয়েলাসহ বহু দেশের অর্থনীতি পর্যুদস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে বাংলাদেশ নিয়ে নানামুখী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বিস্তার লাভ করেছে। ষড়যন্ত্রের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থাকলেও আইনের শাসন রক্ষা, মাদক ও মানব পাচার দমনে র্যাবের অবদান অপরিসীম।
অপরদিকে বিগত ২৪ মে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, যা নিষেধাজ্ঞার চেয়ে মারাত্মক। ওই ভিসানীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞ বিচারকদের টার্গেট করা হয়েছে।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়, ‘দেশে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অভাব রয়েছে। আবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোয় যেসব সরকারি কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন, তাদের অধিকাংশের ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিষয়ের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নেই। ফলে এসব সরকারি কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ অবদান রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে।’
‘বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ দুঃখজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। কোনও দেশ যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হলে তাদের ফরেন রিজার্ভ জব্দ করা পুরনো রীতি। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বহু দেশের ফরেন রিজার্ভ জব্দ করেছে এবং তাদের অর্থনীতি পর্যুদস্ত করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে অদূর ভবিষ্যতে যেকোনও অজুহাতে বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জব্দ হতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা আছে।’
রিটে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এর ধারা ৭ (এ) (ডি) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেন রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা করে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা থাকে, তাই ওই ফরেন রিজার্ভ যদি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক যেকোনও অজুহাতে জব্দ হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে পারবে না। এতে দেশের জনগণের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। বহু লোকজন খাদ্যের অভাবে মারা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে যেসব দেশের ফরেন রিজার্ভ জব্দ করেছে, সেসব দেশের জনগণকে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়েছে বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।