জানুয়ারি ২৭, ২০২২, ০৩:১৩ পিএম
“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে কবিদের এবং আবৃত্তিকারদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি একজন রাজনীতিবিদ, বক্তৃতা দিয়ে বেড়াই কিন্তু আমার মনে হয়, আমি যে কথা বলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতার মধ্য দিয়ে, গানের মধ্য দিয়ে, নাটকের মধ্য দিয়ে।”
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ২০২০-২০২২ কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল সেই সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্র। তিনি এর প্রতিবাদ শুরু করেন। ছাত্রলীগ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তখনকার অন্যান্য ছাত্র সংগঠনসহ সবাইকে নিয়ে তিনি ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম ধর্মঘট। সেই ধর্মঘটে শেখ মুজিব তখনকার ছাত্র নেতাসহ অনেকে গ্রেপ্তার হন। সেই থেকে আমাদের সংগ্রাম শুরু।”
তিনি বলেন, “আমাদের আজকের যে স্বাধীনতা অর্জন এবং জাতির পিতার যে ঐতিহাসিক ভাষণ, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' সে এক অমর কবিতা। এই কবিতা অর্জন হয়েছে সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে। এর মধ্যে অনেক চড়াই-উৎড়াই পার হতে হয়। আমরা তখন স্কুলের ছাত্রী। তখন রবীন্দ্র সাহিত্য বাতিল করা হলো, রবীন্দ্র সংগীত বাতিল করা হলো। বাংলা ভাষাকে বাংলা অক্ষরে লেখা না, কখনো আরবি শব্দে লেখার, কখনো ল্যাটিন শব্দে লেখা—এ রকম আঘাত আমাদের ওপর বারবার এসেছে। বাঙালি থেমে থাকেনি, এর প্রতিবাদ করেছে।”
কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার যা কিছু দিয়ে গেছেন সেটা আমাদের সম্পদ। নীল দর্পন নাটকের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন যেভাবে এগিয়ে গিয়েছিল বা একটি কবিতার শক্তি যে কত বেশি সেটা তো আমরা নিজেরাই জানি। '৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা যাচ্ছে না, তখন কবিতার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের ভাষা বেড়িয়ে আসে। মানুষ সেখানে উদ্বুদ্ধ হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে কবিদের এবং আবৃত্তিকারদের, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, “আমি নাম নিতে চাই না। তখন অনেকে যে যেভাবে পেরেছেন লিখেছেন। নাটক করেছেন। বই ছাপিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। যার জন্য গ্রেপ্তারও হতে হয়েছে কাউকে কাউকে কিন্তু থেকে থাকেনি কেউ। আমরা যখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলাম তখনো পথনাটক, কবিতা, আবৃত্তির মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে আমাদের। সেখানে অনেক বাধা-বিপত্তিও এসেছে। তখন যে কবিতা উৎসব হতো অনেক বাধার মধ্য দিয়েই করতে হতো। আমার অভ্যাস ছিল, আমি প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে যেতাম। হয়তো কখনো দূরে বসে থাকতাম বা গাড়িতে বসে থেকে শুনতাম।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি একজন রাজনীতিবিদ, বক্তৃতা দিয়ে বেড়াই কিন্তু আমার মনে হয়, আমি যে কথা বলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতার মধ্য দিয়ে, গানের মধ্য দিয়ে, নাটকের মধ্য দিয়ে। সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানো যায়। আমাদের দেশে আগে কবিয়ালদের লড়াই হতো। আসলে বাঙালিরা সহজাতভাবেই কবি, এটা হলো বাস্তবতা।”