বিচার চেয়ে নিহত শিশুপুত্রের জামা নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘোরেন তিনি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০১:২৮ এএম

বিচার চেয়ে নিহত শিশুপুত্রের জামা নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘোরেন তিনি

নিহত শিশু সন্তানের জামা হাতে নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বিচার চেয়ে বেড়াচ্ছেন এক দিনমজুর। পুলিশও কুলকিনারা করতে পারেনি হত্যাকাণ্ডের। তিন বছর ধরে এভাবে ঘুরেও তাই বিচার পাননি ওই দিনমজুর।

২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর। বাড়ির পাশে বালুর ডিবির মধ্যে পুঁতে রাখা শিশুপুত্রের মরদেহের সন্ধান পান দিনমজুর বাবা আক্তারুজ্জামান। এর আগের দিনই শিশু জাহিদ হাসান (১২) নিখোঁজ হয়েছিল। সন্তানের লাশ পাওয়ার পর থানা–পুলিশের কাছে যান বাবা। তার বিশ্বাস ছিল, পুলিশ তাঁর ছেলের হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনবে, ন্যায় বিচার পাবেন তিনি। কিন্তু তিন বছরেও দিনমজুর এই বাবা কোনো বিচার পাননি। সন্তানের পরার জামা নিয়ে অশ্রুসজল চোখে দুয়ারে দুয়ারে বিচার চেয়ে বেড়ান।  

জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বিধাই গ্রামের মো. জালাল উদ্দিনের ছেলে আক্তারুজ্জামানের শিশুপুত্র জাহিদ হাসান। আক্তারুজ্জামান বলেন, যেদিন লাশ পেয়েছিলেন সেদিনই খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে ১৫ জনের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন। এরপর থানা–পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাত ঘুরে বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন মামলাটি তদন্ত করছে। দীর্ঘ তিন বছর হলেও মামলার চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, এখন প্রতিদিন সন্তানের জামা জড়িয়ে ধরে কাঁদি। ‘মামলার এত দিন পরও কোনো আশার আলো দেখছি না। কবে চার্জশিট দেবে তাও বলতে পারছি না। আমি গরিব মানুষ বলে টাকার জন্য হত্যাকারীদের বিচার করতে পারব না। ওরা আমার শিশুপুত্রকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এরপর মরদেহ বালুর ডিবির মধ্যে পুঁতে রাখে। পারিবারিক বিরোধে ওরা আমার শিশুপুত্রের ওপর প্রতিশোধ নিল। আমি এখন বিচার ছেড়ে দিয়েছি ওপরওয়ালার কাছে।’ 

আক্তারুজ্জামানের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, এর আগে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তিন দফা মামলার অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন আদালত। আগামী ২২ তারিখ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন গাজীপুর জেলা আদালতের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুল ইসলাম।

পুলিশ জানায় ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই চারজন হলেন, লাল মিয়া (৫৫), সাইদুল ইসলাম (৪০), সারফুল ইসলাম (৪৩) ও সাইজুদ্দিন (৪৩)। তাঁরা সবাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। মামলার ৮ আসামি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন, জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), চানমিয়া (৫৪), মানিক মিয়া(৫৫), দুলাল মিয়া (৫০), রাসেল মিয়া (২৫), রুবেল মিয়া (২৬), বজলুল রশিদ (৪৫) ও কুদরত আলী (৪০)। তিনজন নারী অভিযুক্ত মামলার চার্জশিট পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে জামিনে আছেন। তাঁরা হলেন, জোছনারা খাতুন (৫০), নেহার খাতুন (৫০) ও রাশিদা খাতুন (৫০)।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন গাজীপুরের পুলিশ সুপার মাকছেদুর রহমান বলেন, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। 

 

Link copied!