জানুয়ারি ২২, ২০২৩, ০৭:১৮ পিএম
বাবার অমতে নিজের পছন্দে বিয়ে। পরিবার থেকে দূরে ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে নতুন জীবনের শুরু করলেন। দুজনের আয়ে সংসার ভালোমতো না চলায় অশান্তি যেন পিছু ছাড়ছিল না। একদিন ঝগড়া করে স্ত্রীকে রেখে বেরিয়ে গেলেন স্বামী। স্ত্রী উপায় না দেখে বাবাকে জানালেন পারিবারিক অশান্তির কথা। বাবা বললেন সব ছেড়েছুড়ে ফিরে আসতে।
স্বামী নাছির উদ্দিন ওরফে বাবু চলে যাওয়ার পর বাবার ডাকে পিতৃগৃহে ফিরে এলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতীর মেয়ে পারুল আক্তার। তখনো জানেন না বিয়ের তিন বছর পরও বাবা এখনো মেনে নিতে পারেননি। ক্ষুব্ধ বাবা পরিবারের অসম্মান হওয়ায় মেয়েকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেন। ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে মেয়েকে টাঙ্গাইল থেকে জয়পুরহাটে নিয়ে গেলেন পারুলের বাবা আ. কুদ্দুস খাঁ। সাথে বন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মণ্ডল।
স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর বাবার কথামতো নতুন জীবনের পথে চলতে নতুন জায়গায় গেলেন পারুল। দেখলেন বাবার অন্যরূপ। জয়পুরহাটে নিয়ে রাতের অন্ধকারে একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় পারুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাঁর বাবা। বন্ধু মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেন মেয়েকে।
গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) আদালতের কাছে মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার এই বিবরণ তুলে ধরেন পারুলের বাবা আ. কুদ্দুস খাঁ। মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করায় কারাগারে নেয়া হয় তাকে।
পারুলের বাবার এই জবানবন্দি আজ (২২ জানুয়ারি) ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)।
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পারুল সব ভাইবোনের মধ্যে মেধাবী ছিলেন। স্কুলে তাঁর রোল নম্বর ছিল ২। দেখতেও ছিলেন সুন্দরী। বাবা কুদ্দুসের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে শিক্ষিত করবেন। কিন্তু নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা ক্ষুব্ধ হন।
বনজ মজুমদার বলেন, তখন থেকেই কুদ্দুসের পরিকল্পনা ছিল মেয়ে তাঁকে যে অসম্মান করেছে, তাতে তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। মেয়ের বিয়ের তিন বছর পর সেই সুযোগ পেয়ে তিনি তাঁর বন্ধুর সহযোগিতায় মেয়েকে হত্যা করেন। কুদ্দুসের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোকাদ্দেছকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মেয়েকে হত্যার পর কুদ্দুসের মধ্যে আরেকটা বিষয় কাজ করছিল যে তাঁর মেয়ের এই পরিণতির জন্য নাছির দায়ী। তাঁকেও শাস্তি দিতে হবে। তাই মেয়ের জামাইকে ফাঁসাতে একের পর এক মামলা করেছেন তিনি। রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় থানা– পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই পুলিশ প্রতিবেদন দেন। মেয়ের বাবাও বারবার নারাজি দেন।
পিবিআই জানায়, পারুলের বাবা শুরুতে অপহরণ ও গুমের মামলা করলেও সর্বশেষ আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন তিনি। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে। তদন্তে নেমে ২০১২ সালে মেয়ের বাবার করা সাধারণ ডায়রিতে দেওয়া একটি ফোন নম্বরের সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়।
পিবিআই জানায়, মেয়েকে হত্যার পর মেয়ের জামাতা নাছিরকে শাস্তি দিতে দীর্ঘ সাত বছর ধরে মামলা চালিয়েছেন কুদ্দুস। এর জন্য নিজের জমিও বিক্রি করেছেন তিনি।