নভেম্বর ১৭, ২০২১, ১১:২৫ এএম
কথায় আছে, বিজ্ঞান, দর্শন ও শিল্প – এই তিনের মিলিত রূপ স্থাপত্যবিদ্যা। সৃষ্টিশীল মানুষ এসবকে সমন্নয় করতে পারেন নিখুঁতভাবে, হয়ে ওঠেন সত্যিকারের সাধক। মেরিনা তাবাসসুম তেমনই একজন চিন্তাশীল মানুষ। এদেশের অন্যতম মেধাবী স্থপতি তিনি।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। সম্প্রতি যোগ হলো আরেকটি। বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম এবার মানবিক ঘর তৈরির জন্য যুক্তরাজ্যের মর্যাদাপূর্ণ সন পদক পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রথম স্থপতি হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের এই স্থপতি।
মেরিনা তাবাসসুম সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেরিনা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘরবাড়ি নকশার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি মনোনিবেশ করেছেন এক বাস্তব সমস্যার দিকে। আর সেটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সে উপযোগী বাড়ি তৈরির নকশা করেছেন।
বর্ষাকাল উপকূলীয় মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। বিশেষ করে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পানির উচ্চতা বেশি থাকে। সম্প্রতি বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে মেরিনা তাবাসসুম বিশেষ ধরনের বাড়ির নকশা করেছেন।
তবে তিনি বর্ষাকে উপকূলীয় মানুষের জন্য আশীর্বাদও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্ষা শেষ হলে চর পড়ে। চর এলাকায় চাষাবাদ ভালো হয়। ফলে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের সারাবছরের খাদ্যের সংস্থানে এই চর খুবই উপযোগী।’
মেরিনা তাবাসসুম বলেন, ‘স্থপতি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদেরই দায়িত্ব। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার, অথচ এতে তাদের বিন্দুমাত্র দায় নেই।’
গত বছর মেরিনা এবং তাঁর দল ভূমিহীন চরের বাসিন্দাদের জন্য কম খরচের ‘মডুলার হাউস কিট’ তৈরিতে কাজ শুরু করেন।
পুরস্কার জেতার প্রতিক্রিয়ায় মেরিনা বলেন, ‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা কৌতুক। আগের বিজয়ীরা ভালো কাজ করেছেন, সেই তুলনায় আমার কাজ এখনো চলমান। এখনো অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি।’
স্থপতি মেরিনা তাঁর কাজ ও জীবন সম্পর্কে সন জাদুঘরে বক্তৃতা করেন। এরপর স্যার ডেভিড চিপারফিল্ডের সভাপতিত্বে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকার দক্ষিণখানে বায়তুর রউফ নামের একটি শৈল্পিক নকশার মসজিদের জন্য ২০১৮ সালে স্থপতি হিসেবে জামিল প্রাইজ পান মেরিনা তাবাশ্যুম। এর আগে একই নকশার জন্য ২০১৬ সালে তিনি সম্মানজনক আগা খান পুরস্কার পান। সুলতানি আমলের স্থাপত্যের আদলে নকশাকৃত এ মসজিদ ২০১২ সালে ঢাকায় নির্মিত হয়।