আসন্ন রমজানে দেশের এক কোটি পরিবারের প্রায় চার কোটি মানুষকে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। করোনা পরিস্থিতিতে আয় হ্রাস ও পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রমজান শুরুর আগে এক দফা এবং রমজানের মাঝে এক দফা- মোট দুই দফায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর সরবরাহ করা হবে। এ কাজের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যা যা পণ্য সরবারহ হবে
সূত্র জানায়, প্রতিটি পরিবার শবেবরাত থেকে রমজানের আগে একবার দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি ছোলা পাবে। আবার মধ্য রমজান থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত একই পরিমাণ পণ্য আরেক দফা দেওয়া হবে। এছাড়া, কোনো কোনো এলাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ ও খেজুরও দেওয়া হবে। প্রতি দফায় এসব পণ্য পেতে দরিদ্র পরিবারগুলোর খরচ হবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। টিসিবির তথ্য মতে, বর্তমান বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল খুচরা ১৫৫ থেকে ১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মসুর ডাল মান ও জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১১৫ টাকা দরে। চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। টিসিবি সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকা, ডাল ও চিনি প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে। অর্থাৎ বর্তমান বাজারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে পণ্য পাবে এক কোটি পরিবার। যদিও রমজানের সময় কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
উপকৃত হবে চার কোটি মানুষ
সরকারের এ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় চার কোটি মানুষ দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবে। সরকারের সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের মতো। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরলে দরিদ্র জনগণের সংখ্যা প্রায় মাড়ে তিন কোটি। কিন্তু কভিডের কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যাদের জন্য এই কর্মসূচি তাদের অনেকে পণ্য পাচ্ছেন না। অনেকে কৌশলে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনে ব্যবসাও করছেন। সম্প্রতি মালিবাগের একটি দোকানে টিসিবির ট্রাকে বিক্রি হওয়া ৩০টি সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেছে। আবার অনেকে একাধিক ট্রাকে কয়েকবার লাইনে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত পণ্য সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে প্রত্যন্ত এলাকাসহ অন্যান্য জায়গায় দরিদ্ররা সরকারের দেওয়া এসব পণ্য পাচ্ছেন না।
পণ্য ক্রয়ের চিন্তা টিসিবির
টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে টিসিবির গুদামে ১৬ হাজার টন ডাল রয়েছে। আরও ২৪ হাজার টন ডাল সংগ্রহ করবে সংস্থাটি। বর্তমানে ২০ হাজার টন চিনি রয়েছে, যা বাড়িয়ে ৪০ হাজার টনে উন্নীত করতে হবে। টিসিবির গুদামে দুই কোটি লিটার ভোজ্যতেল রয়েছে। প্রয়োজন হবে আরও দুই কোটি লিটারের। এ ছাড়া ১০ হাজার টন ছোলা মজুদ আছে।