ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাত জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণার কারণে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক, নৌ ও রেলপথে বিচ্ছিন্ন হয়েছে রাজধানী ঢাকা। যার ফলে পরিবহন সংকটে বিপাকে পড়েছে কর্মজীবীরা। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের দূর্ভোগ দেখা যায়।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় লকডাউন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সোমবার (২১ জুন)। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ জেলাগুলোতে সার্বিক কার্যাবলী (জনসাধারণের চলাচলসহ) আগামী ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস নেই ঢাকায়
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিধিনিষেধে গাড়ি চলাচলের বিষয়ে বলেন, যে সাতটি জেলাতে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে তার যেকোনো একটিকে এড়িয়ে ঢাকা শহরের বাস প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রুটে দূরপাল্লার সব বাস গাজীপুর হয়ে চলাচল করে। উত্তরবঙ্গের সব বাস গাজীপুরের চন্দ্রা হয়ে চলে। দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সব বাস মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা হয়ে যাতায়াত করে। সিলেট ও চট্টগ্রামের বাস নারায়ণগঞ্জ হয়ে চলে। সুতরাং কোনোভাবেই দূরপাল্লার বাস চলাচল সম্ভব নয়।
বৃষ্টিতে ভোগান্তি বৃদ্ধি
মঙ্গলবার ভোর থেকেই ঢাকায় কোনো দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। যদিও বৃষ্টির কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় আটকে যাওয়া ঢাকাগামী বাসগুলোকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে কোনো বাস যেতে পারছে না। কিন্তু ঢাকার পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে লোকজন সিএনজি,লেগুনায় করে প্রবেশদ্বারে আসছে। কিন্তু এরপর পরিবহন সংকটে ভোগান্তি তীব্র হয়। এদিকে বৃষ্টি থাকায় রাজধানীতে যাত্রীদের তুলনায় গণপরিবহন কম দেখা যায়।
বৃষ্টির কারনে গণপরিহনে ওঠা নামায় ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
ট্রেন চলছে সীমিত পরিসরে
বাস বন্ধ হলেও চালু রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। তবে যেসব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সেসব জেলায় ট্রেন থামবে না। এ বিষয়ে সোমবার (২১ জুন) রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপনের আলোকে লকডাউনের আওতায় থাকা ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাত জেলার রেল স্টেশনে ট্রেন থামবে না। মূলত গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে স্টেশনে ট্রেন থামতে হয়, সেসব স্টেশনে থামবে না। যেসব জেলায় রেল স্টেশন আছে এবং লকডাউন করা হয়েছে সেইসব স্টেশনেও থামবে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা থেকে গাজীপুরের টঙ্গী ও জয়দেবপুর হয়ে যে সব আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে সেগুলো ওই স্টেশনে থামছে না। নারায়ণগঞ্জ হয়ে চলে শুধু মেইল ও লোকাল ট্রেন। করোনার কারণে এসব ট্রেন বন্ধ রয়েছে।
সারাদেশে নৌপথেও চলাচল বন্ধ
প্রথমে নির্দিষ্ট সাত জেলার কথা বললেও পরবর্তীতে সারাদেশের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএয়ের পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পণ্য পরিবহন এবং জরুরি সেবা দেওয়া নৌযানের ক্ষেত্রে এ আদেশ কার্যকর হবে না।
খোলা রয়েছে আকাশপথ
নতুন এ নির্দেশনায় খোলা রয়েছে আকাশপথ। যেহেতু লকডাউন জারি করা কোনো জেলাতে বিমানবন্দর নেই, সেহেতু ফ্লাইট পরিচালনা করতে কোনো সমস্যা নেই ৷ মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশপথ খোলা থাকায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, যশোর ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।