শর্তসাপেক্ষে অবরোধ উঠলো শাহবাগে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৩, ২০২১, ০৯:২৫ পিএম

শর্তসাপেক্ষে অবরোধ উঠলো শাহবাগে

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে কুমিল্লার একটি মন্দিরের পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখাকে কেন্দ্র করে দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার-বিভাগীয় তদন্তসহ ৮ দফা দাবি নিয়ে চলা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে  সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত গণ-অনশন, অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হয়েছে৷

শনিবার(২৩ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে এই কর্মসূচি শুরু হয়।  দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান-অনশন করার পর প্রায় ১ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় আটকে রেখে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করা হয়। এর আগে সাড়ে ১২টার দিকে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির এসব অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত গণ-অনশন, অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে শাহবাগ মোড়ের চারপাশে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। অবরোধের ফলে শাহবাগ থেকে পল্টন, সায়েন্স ল্যাব, বাংলামোটর ও টিএসসি অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কর্মসূচিতে থেকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ৮ দফা দাবি ঘোষণা করে।পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে 'চল চল ঢাকায় চল' শ্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে।

শনিবারের কর্মসূচি থেকে আরও জানানো হয়, আগামী ৪ নভেম্বর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্যামাপূজায় দীপাবলী উৎসব বর্জন করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে স্ব স্ব মন্দিরে নিরবতা পালন করা হবে। এছাড়া মন্দির-মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার টানানোর প্রতিবাদী কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।

কর্মসূচিতে ঘোষিত আট দফা দাবি

১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ ৮ দফা দাবি ঘোষণা করে বাংলাদেশ  পূজা উদযাপন পরিষদ। ঘোষিত ৮ দফা হলো-

১. শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

২. সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুণর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যুন ২০ লক্ষ টাকা প্রদান বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করত হবে।

৩. নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৫. সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৬. প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরকেও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৭. ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন যারা:

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক(জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী।

কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন অংশগ্রহণ করে।  

Link copied!