শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: দুই দশক ধরে পলাতক আসামী, ধরা পড়ার আগে করতেন ইমামতিও

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৯, ২০২২, ০৫:০২ পিএম

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: দুই দশক ধরে পলাতক আসামী, ধরা পড়ার আগে করতেন ইমামতিও

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি শেখ মো. এনামুল হক ওরফে শেখ মো. এনামুল করিম (৫৩)। নাম-ঠিকানা বদলে মসজিদের ইমামতি করেন দীর্ঘ প্রায় আট বছর। দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর পলাতক থাকার পর অবশেষে তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছ থেকে ৭৬ কেজি ও ৪০ কেজি ওজনের দুটি বোমা উদ্ধার করা হয়। বোমা পুতে রাখার ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ শেখ এনামুল হকসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।



র‌্যাবের জঙ্গি সেল বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিভিন্ন মামলা পর্যালোচনা ধারাবাহিকতায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি জঙ্গি শেখ এনামুল হককে গ্রেফতার করা হয়।

তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়িক সূত্রে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও জঙ্গি সংগঠন হুজির আমীর মুফতি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে এনামুলের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের ছোট ভাই আনিসের সঙ্গে যৌথভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে 'সোনার বাংলা ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ' নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এনামুল।

মুফতি হান্নান ও অন্যান্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালের জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার গোপন বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী কারখানায় সাবান তৈরির ক্যামিক্যাল সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কারখানায় জমা করেন। এরপর লোহার ড্রামের ভেতর দুটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে পুতে রাখে।

এনামুল প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অন্যতম পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে এনামুল প্রথমে ঢাকার মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যান। পরে তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে ক্বারী না হওয়া সত্ত্বেও ক্বারী পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে আট বছরের বেশি ইমামতি করেন।

গাজীপুরে অবস্থানকালীন সময়ে ২০১০ সালে তিনি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ও নাম আংশিক বদলে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। এ সময় গাজীপুরে একটি হোমিও প্যাথি কলেজে দুই বছর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানা যায়। একইভাবে তিনি নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করতেন।

কমান্ডার খন্দকার আর মঈন বলেন, ২০১০ সালে এনামুল ঢাকায় উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে থাকেন। ঢাকার উত্তরায় ২০১৫ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে তিনি ক্যান্সার নিরাময় কেন্দ্র নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ক্যান্সারের ভুয়া হারবাল চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন।

এছাড়া তিনি নিজেকে হেপাটাইটিস-ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিকস, মেদ, বন্ধ্যাত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনী, যৌন, মানসিক রোগসহ বহুবিধ রোগের সফল চিকিৎসক।

Link copied!