মার্চ ৭, ২০২৩, ০১:৫৬ এএম
যুক্তিসঙ্গত সব সাজেশন সরকার শুনতে চায় উল্লেখ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সুশীল সমাজের বক্তব্য বন্ধ করার উদ্দেশ্য সরকারের নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সুশীল সমাজের সুপারিশগুলো সরকার গুরুত্বের সাথে নিবে বলেও তিনি জানান।
সোমবার রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইউএসএইডের প্রামোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস্ প্রকল্পের আওতায় কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নট ফর প্রফিট ল (আইসিএনএল) আয়োজিত ‘শেপিং অব থার্ড সেক্টরল’স এন্ড পলিসিস’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আবার বসা হবে, সেখানে যেকেউ মতামত দিতে পারবেন। কেন এই আইন করতে আমরা বাধ্য হয়েছি, তার প্রেক্ষাপট সকলেই জানেন। এটা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। অনেকেই বলেছেন, এই আইন করে কোন উপকার হয়নি, আমার মনে হয় কিছুকিছু উপকার হয়েছে। আমি এমন কথা বলবো না, আইনটির কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। সব আইনেরই কিছুকিছু পদ্ধতিগত সমস্যা থাকে। আবার কিছুকিছু বাস্তবায়নের সমস্যা থাকে। যখন বাস্তবায়নে সমস্যা হয়, তখন আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়। ঠিক সেকারণেই বলছি, এই আইন নিয়ে আমরা আবারও বসবো। যদি বিধি পরিবর্তন করে সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা সেদিকে যাবো। যদি তার পরেও আমরা দেখি যে, আইনটির সংশোধন করা প্রয়োজন আছে, সেটা করতেও আমরা পিছুপা হবো না। কিন্তু সম্পূর্ণ আইনটিকে বাতিল করে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না। সেজন্য আসুন আমরা আইনটি নিয়ে আবার বসি এবং সেখানে আইনটির সমস্যাবলী চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করি। তিনি বলেন, এই বৈঠক রমজানের আগেই হতে পারে।”
নাগরিক সমাজের প্রতি ইঙ্গিত করে আইনমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের যেমন সংবিধানের প্রতি আনুগত্য আছে, তেমনি আমাদেরও আনুগত্য আছে। আমরাও চাই না সংবিধান বিরোধী কোন আইন হোক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, কারও বাক-স্বাধীনতা বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ করার জন্য এটা তৈরি করা হয়নি। পেনাল কোডে ফিজিক্যালি চুরি করলে কি শাস্তি হয়, সেটা আছে। প্রযুক্তির বিস্তারের ফলে চুরি আর শুধু ফিজিক্যালি হয় না। ডিজিটাল মাধ্যমেও হয়। ডিজিটাল মাধ্যমে যে অপরাধগুলো হচ্ছিল তা প্রতিরোধের জন্য একটি আইনের প্রয়োজন ছিল। বিশ্বের যেখানেই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছে, সেখানে কেউ বলেনি, এ আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই।”
তিনি বলেন, আইনটি ভেটিং এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে এলে অংশীজনদের সঙ্গে একটি বৈঠক করা হয়েছিল। এরপর সংসদে স্থায়ী কমিটির সভায় এটকো ও সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল। সেখানে অংশীজনদের কিছুকিছু সাজেশন বা পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছিল। দুঃখের হলেও সত্য এই আইন করার পর আমরা অনেক মিসইউজ ও অ্যাবিউজ দেখেছি। যখন এই আইনের যথেষ্ঠ অপব্যবহার হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসেছিলাম এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসেছিলাম। এই বৈঠকে আমরা প্রথমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক। এরপর আমি জেনেভায় গিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পৃথিবীতে এরকম কোন আইন আছে কিনা, যদি থেকে থাকে তাহলে তার বেস্ট প্রাকটিসগুলো কি কি? সেটা জানা এবং সেটাকে এই আইনের সাথে যুক্ত করে দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করা হবে।
আনিসুল হক আরও বলেন, “ওই বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিস, আইন, পররাষ্ট্র ও ¯রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি ডিভিশন এর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে এ বিষয়ে একটি সাজেশন পাওয়া গেছে এবং সেটা সরকার দেখছে। তিনি বলেন, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া আছে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যাতে সঠিক ও সাবলিলভাবে চলতে পারে, সেজন্য বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬ এর বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ণের বিষয়ে তিনি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সাথে কথা বলবেন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ইউএসএইড-এর মেধাবি গিরি,অ্যাক্টিং অফিস ডিরেক্টর বলেন, “আজকের এই আয়োজনের প্যানেলিষ্টরা যে প্রস্তাবনাগুলো উপস্থাপন করেছেন, ইউএসএইড তার প্রতি সমর্থন জানায়। আশাকরি প্রস্তাবনাগুলো গৃহিত হলে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছা সেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬ এর প্রয়োগকে আরো কার্যকরি ও জনহিতকর করে তুলবে। আশা করি আমরা শীঘ্রই আজকের আলোচনার প্রেক্ষিতে আইন প্রণয়নের সাথে জড়িতের কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পারবো।”
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অধ্যাপক সি আর আবরার ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শেপিং অব থার্ড সেক্টরস ল‘স এন্ড পলিসিস অনুষ্ঠানের ধারণাপত্র পাঠ করেন আইসিএনএল-এর কনসাটেন্ট শারমিন খান। এরপর প্যানেল আলোচকবৃন্দ নাগরিক সমাজের উপর বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী খুশী কবির সহ দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন ।