সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ৯৫ জন বিচারপতি বর্তমানে নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেছেন, “১৯৭২ সালে হাইকোর্ট বিভাগে ১০ জন এবং আপিল বিভাগে ৩ জন বিচারক নিয়ে সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি এক মহীরুহে পরিণত হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের এ বিশাল অঙ্গের কাজের পরিধি ও বৈচিত্র্যতা যেমন বেড়েছে, তেমনই জনবল ও এজলাসের সংখ্যা বেড়েছে। বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা ও স্বাধীনতা বেড়েছে।”
আইনমন্ত্রী বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপই ছিল নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। তার ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল নিশ্ছিদ্র আইনি কাঠামোর ভেতরে।”
শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে ফেরার পর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সেগুলিও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই নেওয়া হয়েছিল বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, “১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর করার পর বঙ্গবন্ধু যেসব পদক্ষেপ নেন তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য পদক্ষেপ ছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা। এর ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর আইনের শাসনের প্রতি ছিল গভীর আস্থা, ছিল পরম শ্রদ্ধা। আর একটি নতুন রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল তার নিঁখুত ও দূরদর্শী পরিকল্পনা। সে কারণেই তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক। বঙ্গবন্ধুর ছিল নিয়মতান্ত্রিকভাবে সোনার বাংলা গড়ার পরিষ্কার দর্শন এবং তিনি সেভাবেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠিত করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির, একাত্তরের পরাজিত শক্তি সেই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের অধ্যায় ছিল সামরিক শাসনের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং নির্বিচারে সংবিধান লঙ্ঘন। এই অধ্যায়ে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, বিচার পাওয়ার পথই রুদ্ধ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর একটি মামলা পর্যন্ত রুজু করা হয়নি। বরং খুনিদের যাতে বিচার করা না যায় সেজন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নামে একটি কালো আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেই আইন ২১ বছর এই দেশে বলবৎ ছিল।”
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সম্মানীয় অতিথির বক্তৃতা করেন।