চাঙ্গা করতে শেয়ারবাজারে ঢুকছে ৬০০ কোটি টাকা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২, ২০২৩, ০৬:০৬ পিএম

চাঙ্গা করতে শেয়ারবাজারে ঢুকছে ৬০০ কোটি টাকা

এবার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবি নয়, ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে তারল্য সহযোগিতা হিসেবে স্বল্প সুদে ঋণ পাবে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক। আর্থিক সক্ষমতা ভালো— এমন প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য ঋণের এ পরিমাণ হবে ২০ কোটি টাকা। তবে শর্ত হলো এর সাথে সমপরিমান অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। ঋণের এ টাকা পরিশোধে ৬ মাস থেকে এক বছর গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হবে।

আশা করা হচ্ছে এ টাকা ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক পেলে তা চলমান অচলাবস্থা কাটিয়ে সাবলীল কেনাবেচায় ফিরবে শেয়ারবাজার। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে বড়দের পাশাপাশি বেশি উপকৃত হবে সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড বা সিএমএসএফ এ জমাকৃত অলস টাকা থেকে এ তহবিল দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সিএমএসএফ এর তহবিলে থাকা টাকা থেকে আপাতত ৩০০ কোটি ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। এর সাথে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নিজস্ব কন্ট্রিবিউশন যুক্ত হয়ে তহবিলের মোট পরিমান তখন দাঁড়াবে ৬০০ কোটি টাকা।

বিএসইসি'র পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন না আসলেও বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। কমিশনের গত সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করছে কমিশন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আস্থার সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটানো এবং তারল্য প্রবাহ বাড়াতে সিএমএসএফ-এর অলস অর্থকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এখান থেকে বড় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংককে ঋণ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে গত কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই আদেশের মাধ্যমে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগ প্রত্যেক অর্থ বছর শেষে লভ্যাংশ দেয়। দীর্ঘদিন পর্যন্ত যেসব বিনিয়োগকারী লভ্যাংশের টাকা নেননি অথবা মালিক খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেসব অর্থ স্ট্যাবিলাইজেশন তহবিলে রাখা হয়। বর্তমানে এ তহবিল আইসিবি তত্বাবধান করছে। এই তহবিল বাজার উন্নয়নে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে কমিশন।

সর্বশেষ সিএমএসএফ-এর তহবিলে ৭০০ কোটি টাকা জমা হয়। আইসিবি এ তহবিল থেকে কিছুটা বাজারে বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। শেয়ারবাজারের চলমান অচলাবস্থায় এই তহবিল থেকেই ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার বিষয়টি নীতিনির্ধারণী কতৃপক্ষ বিএসইসি অনুমোদন করেছে।

তবে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে, যেসব ব্রোকারেজ হাউজের মালিকপক্ষের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, ওইসব কোম্পানি থেকে গ্যারান্টি দিতে হবে। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যারান্টি দিতে হবে। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নেবে, তাদের ঋণের টাকা অবশ্যই ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ শক্তিশালী মৌলভিত্তির বাইরে দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে না।

কমিশন মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে।

বিএসইসি'র পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে সাইড লাইনে বসে আছে। বাজারের অচলাবস্থায় তারা নতুন করে বিনিয়োগ করছে না। ঋণের টাকা বিনিয়োগ শুরু হলে ওইসব বিনিয়োগকারী বাজারে আসবে। এতে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে এবং মন্দা অবস্থা কেটে যাবে। এভাবে লেনদেন ও সূচক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লে ফ্লোর প্রাইস (শেয়ার দরের নিম্নসীমা) তুলে দেওয়ার কথা ভাববে কমিশন।

দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে কৃত্রিমভাবে বাজার ধরে রেখে দরের অস্বাভাবিক পতন ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভেতরেও উদ্বেগ চলছে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন থেকে শেয়ারবাজার নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে আছে। কারণ বাজারে টানা মন্দা চলছে। এ জন্য বাজারের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিশেষ তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাংকের নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় শেয়ারবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের আাশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন সাবেক ডিবিএ সভাপতি আহমদ রশিদ লালী।

আহমদ রশিদ লালী বলেন, সম্প্রতি ব্যাংক কর্তৃক বন্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থ ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পোর্টফলিও থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে করেও নতুন করে তারল্য সৃষ্টির সুযোগ হবে। কারণ ব্যাংক আরও বেশী বিনিয়োগ করতে পারবে।

এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতেও নতুন তারল্য আসবে।

তবে সাম্প্রতিককালে প্রকাশ হয়ে পড়া দুটি ফান্ড ব্যবস্থাপক কর্তৃক ২০০ কোটি ও ৪০ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার ঘটনায় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে আস্থা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলেছেন, এ দুটি ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না বিনিয়োগকারীরা।

Link copied!