রূপপুর প্রকল্পে অর্থ লেনদেন সাময়িক স্থগিত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৪, ২০২২, ১২:১৯ পিএম

রূপপুর প্রকল্পে অর্থ লেনদেন সাময়িক স্থগিত

রাশিয়ার সাথে চলমান প্রকল্প কিংবা বাণিজ্যের লেনদেন সাময়িক স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে রূপপূর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে রাশিয়ার যে ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এই প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করে, সেই রুশ ব্যাংকটি তাদের সঙ্গে আপাতত লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশকে। কারণ রাশিয়ার ওই ব্যাংক বৈশ্বিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যম সুইফটের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে।

যে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হত

ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (ভিইবি)। তারা কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুইফট ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠায়। ওই বার্তায় লেনদেন না করার জন্য বলা হয়। ব্যাংকটি এ-ও বলেছে, বাংলাদেশ যদি রূপপুর প্রকল্পের অর্থ বিলম্বে পাঠায়, তাহলেও কোনো বিলম্ব ফি দিতে হবে না। সুইফটের নিষেধাজ্ঞায় পড়া রাশিয়ার ব্যাংকগুলো বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে আপাতত লেনদেন করতে নিষেধ করেছে।

এদিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক ও বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকেও রাশিয়ার ব্যাংকের কাছ থেকে এমন বার্তা এসেছে বলে জানা গেছে। ওই সব ব্যাংক তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে নিষেধ করেছে বাংলাদেশি ব্যাংককে।

নিষেধাজ্ঞায় যে সব ব্যাংক

সুইফট তার নেটওয়ার্কে থাকা বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোকে গত বুধবার এক চিঠিতে জানিয়েছে, ভিইবি ছাড়াও তাদের নিষেধাজ্ঞায় পড়তে যাচ্ছে রাশিয়ার বাংক আৎক্রিতিয়ে, নোভিকোবাংক, প্রোমসভিয়াজবাংক, বাংক রাশিয়া, সোভকমবাংক ও ভেতেবে বাংক। এর মধ্যে ভেতেবে দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর বাংক আৎক্রিতিয়ে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। বাংলাদেশে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব ব্যাংক এখন আর বাংলাদেশের সঙ্গে সুইফটের মাধ্যমে কোনো লেনদেন করতে চায় না।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত বৃহস্পতিবার কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ায় এখনই অর্থ পাঠাতে হবে, এমন কোনো লেনদেন না করার বিষয়ে সভায় মতামত এসেছে। কারণ, সুইফটে অর্থ আটকে যেতে পারে।

রূপপুরের কাজ চলবে

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে রাশিয়া। রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের নেতৃত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। রূপপুরে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে প্রায় ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি দিয়ে ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রোসাটম বলেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি এবং কাজের সময়সূচিতে কোনো বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ বিষয়ে বলেন, করোনাকালীন সময়ে রূপপূরের কার্যক্রম সচল ছিল। যার ফলে এই ‍মুহুর্তে কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা ভাবছি না। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টা পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই হবে।

রূপপুর প্রকল্পের অর্থ লেনদেনে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক (রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন-আরএমএ) চালিয়ে আসছিল রাশিয়ার ভিইবি। তারা রাশিয়ার ঋণের টাকা বাংলাদেশে পাঠাত। আবার বাংলাদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণের মূল্য বাবদ অর্থ রাশিয়ায় পাঠাত সোনালী ব্যাংক। মাধ্যম ছিল ভিইবি। 

Link copied!