বেটা
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩, ০২:৩২ এএম
হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে আসা লিংকে ঢুকে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবু তালহা। চটকদার সেই বিজ্ঞাপনে বলা ছিল, ‘“বরগাটা” নামের একটি অ্যাপ নামিয়ে সেখানে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দৈনিক ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করুন। বিজ্ঞাপনটি অনুসরণ করে ধাপে ধাপে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তালহা। ঘটনার শুরু গত বছরের অক্টোবরে। এর তিন মাস পরেই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় অ্যাপভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠান।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ ঘটনায় আবু তালহা বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এক চীনা নাগরিকসহ ১২ জনকে শনাক্ত করে। তাঁদের মধ্যে ৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পালিয়ে যান চক্রের হোতা চীনা নাগরিক কেভিন চেন (৪০)।
তদন্তের শুরুতেই মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের (এমএসএফ) একটি ‘মার্চেন্ট’ অ্যাকাউন্টের তথ্য পায় তদন্তকারী দল। অ্যাকাউন্টটির লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাত্র ১৪ দিনে অ্যাকাউন্টে ২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অস্বাভাবিক এই লেনদেনের সূত্র ধরে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পারেন, এ বি সিদ্দিকী নামের এক ব্যক্তির নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে। তবে অ্যাকাউন্ট খোলার এক মাস আগেই মারা গেছেন মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা এ বি সিদ্দিকী।
সিআইডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশি কয়েকজন নাগরিকের সহায়তায় গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর—এই ছয় মাসে ‘টিএনএস’ ও ‘বরগাটা’ নামে দুটি অ্যাপ বানিয়ে মোট ৯৯১ ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কেভিন ও তাঁর সহযোগীরা। সফটওয়্যার ব্যবসার নামে কেভিন বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা করে আসছিলেন। মৃত ব্যক্তির নামে ‘মার্চেন্ট’ অ্যাকাউন্ট খুলে সেটি ব্যবহার করছিলেন চীনা নাগরিক কেভিন।
সিআইডি সূত্র আরও জানায়, তিন বছর আগে কেভিন চেন বাংলাদেশে এসে ‘পিসেস টেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন। নতুন নতুন অ্যাপ খুলে ছয় থেক এক বছর চালাতেন। বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করার পর সংশ্লিষ্ট অ্যাপটি বন্ধ করতেন। আবার নতুন অ্যাপ চালু করতেন। এভাবে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন কেভিন। তাঁর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় আরেকটি মামলা রয়েছে।
কেভিনের প্রতারণার শিকার আবু তালহা গতকাল শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘টিউশনি করে জমানো টাকা থেকে প্রথমে আমি ১০ হাজার টাকা অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করি। পরে শর্ত দেওয়া হয়, বিনিয়োগ করতে হলে অ্যাপে সব সময় ১০ হাজার টাকা জমা রাখতে হবে। পরে আমি আরও দুই হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। অ্যাপ পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা দুই হাজার টাকার মধ্য থেকে প্রথমে দেড় হাজার টাকা বিনিয়োগ করে। আমি দিনে আড়াই শ’ টাকা পেতে থাকি।’
