দেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমানো, ব্যবসার পরিবেশ সহজীকরণ, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের অহেতুক হয়রানি বন্ধ করাসহ আইনের স্বেচ্ছাচারিতা কমাতে কাস্টমস এবং ভ্যাট কাঠামোয় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআইর কাস্টমস ও ভ্যাট বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, শিল্পের জন্য কাঁচামাল কিংবা যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, অযৌক্তিক জরিমানা, এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা এবং মিথ্যা ঘোষণার নামে নানাবিধ হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহুবার আলোচনার পরও সুফল মিলছে না। যা ‘ইজ অব ডয়িং বিজনেস’ বাস্তবায়নে অন্তরায় বলে মনে করেন তারা।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট, আয়কর এবং কাস্টমস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসব বিষয়ে ব্যবসায়ী মহলকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পণ্যের এইচএস কোড ইস্যুতে রাজস্ব কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার আলোচনা হলেও ফলাফল মিলছে না। আমরা সরকারকে অগ্রিম আয়কর দিচ্ছি, কিন্তু সেটি আর রিফান্ড হচ্ছে না। এসব বিষয় ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে, ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
ব্যবসায়ীরা ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদানের বিপক্ষে নয় উল্লেখ করে মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে চাই। তবে সেটি যেন অযৌক্তিক না হয়। এ সময় কাস্টমস এবং ভ্যাট কাঠামো সহজীকরণ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্ট পরামর্শ চান এফবিসিসিআই সভাপতি।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালীর মতে, ব্যবসা বান্ধব কাস্টমস, ভ্যাট এবং কর কাঠামো বাস্তবায়ন করা গেলে সরকারের রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতির আকার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু রাজস্ব প্রশাসন পূর্বের মতই রয়ে গেছে। এ সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কুটির, ক্ষুদ্র এবং স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়নসহ মাঝারি এবং বৃহৎ শিল্পের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেন মোঃ আমিন হেলালী।
কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ এবং এফবিসিসিআই’র পরিচালক ড. মুনাল মাহবুব বলেন, সত্যিকারের ব্যবসা বান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য কাস্টমস এবং ভ্যাট কর্তৃপক্ষকে বেসরকারি খাতের অসুবিধার কথা আন্তরিকতার সাথে শুনতে হবে। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
কমিটির চেয়ারম্যান এ.কে.এম আক্তার হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিতে চায়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তারা পিছিয়ে পরছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অটোমেশন, ডিজিটালাইজেশন ও ইন্টিগ্রেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. মুনির হোসেন, পরিচালকবৃন্দ, কমিটির কো-চেয়ারম্যানবৃন্দ, সদস্যবৃন্দ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।