আয়কর কমানো যায় যেসব উপায়ে

ফাহিম রেজা শোভন

মে ৩১, ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম

আয়কর কমানো যায় যেসব উপায়ে

প্রতীকী ছবি

নৈতিকতা বজায় রেখে জীবন অতিবাহিত করতে কে না চায়? বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম আয় করছেন? সমস্যা নেই। সাড়ে ৩ লাখ পার হয়ে গেছে? তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আপনি পুরুষ হয়ে থাকলে এবং বছরে সাড়ে ৩ লাখের ওপর কামাই করলে আপনাকে আয়কর দিতে হবে। মহিলা করদাতা ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা হলে আয়কর দিতে বাধ্য থাকার সীমা নির্ধারিত আছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য।

জীবন যাত্রার মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় বাড়ছে। সুতরাং ব্যক্তির আয়, করযোগ্য ইনকামে পরিণত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কর কমাতে কে না চায় বলুন? কর ফাঁকি না দিয়ে বৈধ পথেও কর কমানোর সুযোগ আছে।

একটু কৌশল অবলম্বন করে করবছরে বিনিয়োগ করে বৈধ উপায়ে আপনি কর কমাতে পারেন। সারা বছরের আয় থেকে একটু একটু জমিয়ে বছরের শেষে এসে কোথাও বিনিয়োগ করুন।

প্রতীকী ছবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিয়ম অনুযায়ী কিছু খাত আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে করছাড় বা কর রেয়াত পাওয়া যায়।

করদাতা তার বছরের পুরো আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। এই সুবিধার আওতায় বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থ করছাড় পাবেন। তবে করছাড়ের পরিমাণ কোনোভাবেই ১০ লাখের বেশি হবে না।

একদম সাধারণ করদাতাদের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনা কিংবা ডিপিএস করা হলো কর কমানোর অন্যতম সহজ কৌশল। দুটো খাতেই যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারেন।

প্রতীকী ছবি

ধরুন, গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত আপনি ১০ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন। পুরোটাই আপনার করযোগ্য আয়। আপনি এই আয়ের ২০ শতাংশ বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। আপনি সারা বছর একটু একটু খরচ বাঁচিয়ে দুই লাখ টাকাই বিনিয়োগ করলেন। তাহলে আপনি আপনার কর থেকে ৩০ হাজার টাকা (বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ হিসেবে) ছাড় পাবেন।

বিনিয়োগের খাতগুলো হলো: সঞ্চয়পত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার ক্রয়, জীবনবিমার প্রিমিয়াম, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা, সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ প্রভৃতি।

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলেও কর রেয়াত পাবেন। এসব পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার ওপর এই করছাড় দেওয়া আছে।

প্রতীকী ছবি

এবার দেখা যাক, আপনি বিনিয়োগ না করলে কত কর হতো। বর্তমান নিয়মানুসারে, পুরুষ হিসেবে আপনি বছরে ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন। প্রথম সাড়ে ৩ লাখ টাকার জন্য কোনো কর নেই। এর অর্থ আপনার সাড়ে ৬ লাখ টাকার ওপর কর বসবে। সেই টাকার প্রথম ১ লাখ টাকার ৫ শতাংশ হারে কর ৫ হাজার টাকা। পরের ৩ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে প্রদেয় কর ৩০ হাজার টাকা। বাকি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১৫ শতাংশ হারে সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে করের পরিমাণ হবে সাড়ে ৭২ হাজার টাকা।

কিন্তু আপনি যেহেতু আয়ের ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তাই আপনি ৩০ হাজার টাকা (বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ) ছাড় পাবেন। বিনিয়োগের কর রেয়াতের কারণে আপনার কর দাঁড়াবে সাড়ে ৪২ হাজার টাকা। শুধু বিনিয়োগ করেই এতটা ছাড় পাচ্ছেন আপনি, প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। সুতরাং সময় এসেছে একটু কৌশলী হওয়ার।

Link copied!