জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ থাকা ১৬ কোম্পানির মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যর সঙ্গে সম্পৃক্ত ১১টি কারখানা ‘মানবিক কারণে’ সচল করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।
এই দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের একদল কর্মী। তাদের ভাষ্য, মালিকপক্ষকে জানিয়েই তারা সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল– অবিলম্বে লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকোর পোশাক খাতের সব কারখানা খুলে দেওয়া, রপ্তানি বাণিজ্যর জন্য পোশাকের ক্রয়াদেশ পেতে ব্যাংকের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি এবং ব্যবসা চলমান রেখে সকল বকেয়া বেতন, কোম্পানির দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া।
৫ আগস্ট অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে অস্থিরতা চলছে। শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অধিকাংশ কারখানা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ গ্রুপের তিন কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকসই কেবল সরকারের হস্তক্ষেপে সচল রয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও উপদেষ্টা। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে গ্রুপটির বেশিরভাগ উদ্যোক্তা আত্মগোপনে রয়েছেন।
অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ থাকায় এলসি খুলতে পারছে না কোম্পানি। ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া বন্ধ হওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ১৬টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের। এই ১১টি কারখানা সচল করার দাবি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন কর্মীরা।
সরকার রিসিভার (প্রশাসক) নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন বকেয়া নেই বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ব্যাংকগুলো এলসি সুবিধা ও চার মাসের জন্য আর্থিক সুবিধা দিলে বেক্সিমকোর সব কোম্পানি সচল করা সম্ভব বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
কারখানা খুলে দেওয়ার পর পরিচালন খরচ বাদ দিলে প্রতি বছর সাড়ে ৪০০ কোাটি টাকার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব বলেও দাবি করেন তারা।
সরকার ও বেক্সিমকোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হন ২০০৯ সালে।
২০১৯ সালে তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। গত দুটি নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সালমান দেশের ব্যবসায়ী মহলেও ছিলেন প্রতাপশালী একজন।
নিজের ভাই আহমেদ সোহেল এফ রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সালমান ১৯৭২ সালে গঠন করেন বেক্সিমকো (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড), যা পরে গ্রুপ হিসেবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে বিভিন্ন খাতে।
ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, মিডিয়াসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসা।
সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তার সংশ্লিষ্ট সকল ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে। বেক্সিমকো গ্রুপকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া জনতা ব্যাংকও অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
তাতেই বেক্সিমকো গ্রুপের তৈরি পোশাক খাতের সব কারখানার কাঁচামাল আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে লে অফ ঘোষণা করা হয় ১৬ কোম্পানি।
এ অবস্থায় বেতন না পেয়ে বেক্সিমকোর বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে সরকার তিন মাসের বেতনের ব্যবস্থা করে দেয়। পরে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক, কর্মচারীর কর্মসংস্থান ঠিক রাখা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অর্থনীতির স্বার্থে কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে সরকারের উপদেষ্টা পর্যায় থেকে একটি কমিটি করা হয়।
সেই কমিটি বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে সিদ্ধান্ত নেয়। মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলো চালানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় উপদেষ্টা কমিটি। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১ জানুয়ারি তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানিতে ২৫ জন করে স্বতন্ত্র পরিচালক বসায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
তবে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্য কারখানাগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ উপদেষ্টা কমিটি থেকে নেওয়া হয়নি।