কেজিপ্রতি খোলা চিনি ১২০, প্যাকেটজাত ১২৫ টাকা করলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

বিশেষ প্রতিনিধি

মে ১১, ২০২৩, ০২:০৫ এএম

কেজিপ্রতি খোলা চিনি ১২০, প্যাকেটজাত ১২৫ টাকা করলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনির দাম কেজিপ্রতি খোলা ও প্যাকেটজাত যথাক্রমে ১২০ ও ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে এর প্রভাব বাজারে নেই। বাজারে চিনি কেজিপ্রতি ১৩০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ি খোলা চিনি কেজি প্রতি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, "বেঁধে দেয়া নতুন দামে চিনি বিক্রয়ের জন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনকে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। তবে তারা আমাদেরকে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।"

তিনি বলেন, চিনির জন্য বিদ্যমান শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মে শেষ হবে। বাজারে দাম ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে শুল্কছাড় অব্যাহত রাখার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে আমরা চিঠি পাঠাবো।"

বাণিজ্য সচিব বলেন, শুল্ক নির্ধারণ আসলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাজ। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায় ছেড়ে গেলে এনবিআরকে শুল্কহার কমানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কখনো এটি করা সম্ভব হয় কখনো হয় না।

বুধবার (১০ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে "২০২১-২৪ মেয়াদে আমদানিকৃত খাদ্যের মান নিশ্চিতকরণে আমদানি নীতি আদেশ" সম্পর্কে অংশীজন বা স্টেকহোল্ডারদের অবহিতকরণ বিষয়ক এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম ও দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চিনির আমদানি ও সরবরাহ কমেছে।

সচিব বলেন, এ প্রেক্ষাপটে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে দাম সমন্বয় করার অনুরোধ জানালে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনকে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় নতুন দাম নির্ধারণ করে এসোসিয়েশন কে জানিয়ে দেয়।

এদিকে বাজারে চিনির নতুন নির্ধারিত দামের প্রতিফলন শুরু হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর একাধিক বাজারে চিনির কেজি ১৪০/৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও দোকানে চিনি নাই বলা হচ্ছে। 

নিত্যপণ্যমূল্যের বাজার দর নির্ধারণে সরকারের বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন চিনির নতুন দাম নির্ধারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে আগের নির্ধারিত দাম কেজিপ্রতি ১০৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৯ টাকা থেকে একই পরিমাণ বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করার কথা বলা হয়।

কমিশন জানায়, এক কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির প্রস্তাবিত মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা ও পরিবেশক মূল্য হবে ১১৭ টাকা। পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৯ টাকা আর পরিবেশক পর্যায়ে যার দাম হবে কেজিতে ১২১ টাকা।

কমিশন আন্তর্জাতিক বাজারদরের রেফারেন্স দিয়ে জানায়, ২০২২ সালের মে মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি বেচাকেনা হয়েছে ৪২০ ডলারে। চলতি মাসের শুরুতে অপরিশোধিত সেই চিনির দাম ১৬০ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৮০ ডলার।

কমিশন জানায়, ইতোমধ্যে বৈদেশিক মূদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনও হয়েছে। গেলো বছর ১ ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৯০ টাকা। এবার প্রতি ডলার বিনিময় হার ১১০ থেকে ১১১ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।

সরকার গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাজারে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিতে শুরু করে। এর মধ্যে পাঁচ দফায় চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও একবারও সরকারি মূল্য কার্যকর হয়নি। সবশেষে সরকার গত ৬ এপ্রিল প্রতি কেজি চিনির দাম তিন টাকা কমায়। এতে সরকার ঘোষিত পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল কেজিতে ১০৪ টাকা আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৯ টাকা। এবার সরকার নির্ধারিত দাম ১৬ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলো।

Link copied!