অক্টোবর ২৭, ২০২১, ০৮:৪০ পিএম
গত মাসে প্রকাশিত ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত নুতন নীতিমালায় ‘ইমপোট-শেয়ার ক্রাইটেরিয়া’ বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরিভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভবানা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ২য় দিনে (২৭ অক্টোবর, ২০২১) তারিখে “বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা” শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথা বলেন।
ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশসমূহ বাংলাদেশের বাণিজ্যের অন্যতম ব্যবসায়িক পার্টনার এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৩৫% ছিল ইউরোপের সাথে। তিনি জানান, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের সাথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে রুল অফ অরিজিন-এর ক্ষেত্রে কঠিন নীতিমালার মুখোমুখি হতে হবে এবং তা মোকবেলায় ইউ’র দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সাথে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষর করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা নিয়ে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ইউরোপের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের ইপিজেডসমূহে বিশেষকরে ঔষধ, এপিআই এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহŸান জানান রিজওয়ান রাহমান। বাংলাদেশের কৃষি খাতের আধুনিকায়ন এবং রপ্তানিমুখী কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণে ইউরোপের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, গত মাসে প্রকাশিত ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত নুতন নীতিমালায় ‘ইমপোট-শেয়ার ক্রাইটেরিয়া’ বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরিভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভবানা রয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে আমাদেরকে এখনই সচেতনভাবে সরকারী-বেসরকারীখাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যার মাধ্যমে নতুন জিএসপি প্লাস পেতে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের প্রস্তুুতি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বর্হিবিশে^ বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে তিনি সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
ওয়েবিনারে আলোচনায় স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয়, গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর সিইও এবং ব্যবস্থপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, মোহাম্মদী গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএ’র প্রাক্তন সভাপতি ড. রুবানা হক এবং ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উদ-দৌলা প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
বিজিএমইএ’র প্রাক্তন সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, চার দশকে আমাদের তৈরি পোষাকখাতে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে, তবে ইইউ কর্তৃক নতুন জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আমাদেরকে কমপ্লায়েন্সের উপর আরো বেশি হারে মনোযোগি হতে হবে এবং একই সাথে সরকারী ও বেসরকারী খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোষাক খাতের উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণের প্রস্তাব করেন এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতকে আরো বেশি হারে গুরুত্বারোপের আহ্নান জানান।
ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উদ-দৌলা বলেন, বাংলাদেশের কৃষিখাতে আধুনিকায়নে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গবেষণা কার্যক্রম বাড়নো প্রয়োজন, পাশাপশি কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বর্জ ব্যবস্থাপনায় টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বাড়বে ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। তিনি জানান, তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ ৩য় স্থানে রয়েছে, তবে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে তা রপ্তানি বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বীকৃত হালাল সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও টেষ্টিং ল্যাবরেটরি না থাকায়, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশ হালাল পণ্য রপ্তানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর সিইও এবং ব্যবস্থপনা পরিচালক জাভেদ আকতার বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বছরে গড়ে প্রায় ২৩ মার্কিন ডলারের ফাষ্ট মুভিং কনজিওমার প্রডাক্টস্ (এফএমসিজি) পণ্য গ্রহণ করে থাকে এবং বিশেষকরে এদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বাজারকে আরো সম্ভাবনাময় করেছে। বাংলাদেশ হতে মুনাফা প্রাপ্তির লক্ষ্যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয় বলেন, আর্থিকখাতের জন্য বাংলাদেশের।