মে ২৫, ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম
স্বাধীনতার পর বিগত ৫০ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আর অর্থনীতিতে কালো টাকা সৃষ্টি হয়েছে ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সর্বমোট কালো টাকা ও পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ দাড়ায় ১৪৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।
এমনই একটি হিসেব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সমিতির দপ্তর মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা: বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে আসছে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করা হয়। সমিতির প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেট সরকারের চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটের প্রায় ৩ গুণ।
অধ্যাপক আবুল বারাকাত বলেন, বিকল্প বাজেটে অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে ধারনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কালো টাকা ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে কালো টাকার পরিমাণ মোট ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মাত্র ২ শতাংশ সরকারকে উদ্ধারের প্রস্তাব করেছি। এটা যদি উদ্ধার করা সম্ভব হয়, তাহলে সরকার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা পাবে।
এছাড়া, প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা চলমান অর্থ বছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪.৪২ গুণ বেশি। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৯৩.২ শতাংশের যোগান দেয় রাজস্ব। বাকি ৭.৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি হবে ঘাটতি বাজেট।
রাজস্ব আদায়ের উৎস হিসাবে ড. বারকাত বলেন, দেশে কোটি টাকার বেশি আয়কর দেন মাত্র ১০০ জনের মতো করদাতা। কিন্তু অর্থনীতি সমিতির গবেষণা বলছে, ৪ লাখ ১৮ হাজার মানুষ কোটি টাকার ওপরে কর দেওয়ার কথা। কর ব্যবস্থায় সম্পদ কর নেওয়া হয় না। এই খাতে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আসা সম্ভব। ভ্যাট খাতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান সরকারের বাজেটের মতোই। আর, আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর আসবে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, মাদক শুল্ক বর্তমানে ১৫২ কোটি টাকা। এখানে ৩০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। ভূমি রাজস্ব থেকে আসবে আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদেশি অর্থায়ন ও ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পক্ষে আমরা নই। ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র, বন্ড, বিদেশে বসবাসরত নাগরিক ও কোম্পানি থেকে তা নেয় যেতে পারে।
ড. আবুল বারকাত বলেন, আমাদের বাজেট সম্প্রসারণমূলক। সরকার আগামী অর্থ বছরে যে বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, তার আকার ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট সরকারের চেয়ে ২ দশমিক ৭ গুণ বড়। উন্নয়ন এবং পরিচালন ব্যয় মিলে এই বাজেটের আকার ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা বর্তমান বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বড়।
তিনি আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, লাগামহীন কর্মবাজার সংকোচন, মহামারি ও ইউরোপ যুদ্ধের অভিঘাতে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের চাপে আছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আগামী বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে পূর্ণ কর্ম নিয়োজন, শিশুর জন্য সুস্থ জীবন, সবার জন্য আবাসন, মূল্যস্ফীতি রোধ—এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের বেশি সংখ্যক মানুষ বহুমাত্রিক দরিদ্র। ধনী ও অতি ধনীর সংখ্যা ১ শতাংশ। বহুমাত্রিক দরিদ্রের সংখ্যা কোভিডকালের চেয়েও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে প্রকৃত মজুরি না বাড়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সঞ্চয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলা, ১৩৫টি উপজেলা এবং ৪৫টি ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন।