নভেম্বর ২৯, ২০২২, ১০:৪৪ এএম
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটি জানিয়েছে, ব্যাংকের অনেক গ্রাহককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে জামানত নেই। ব্যাংকটির বড় খেলাপিদের থেকে বার্ষিক আদায়ের হার এক শতাংশেরও কম।
গতকাল সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি সংসদীয় সাব-কমিটি গঠন করে সোনালী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেড, প্রিমিয়াম লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেডের খেলাপি ঋণের আর্থিক অনিয়ম যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই সাব-কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ওয়াসিকা আয়েশা খান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আহসান আদেলুর রহমান ও খাজিদাতুল আনোয়ার। কমিটি দীর্ঘ সময় যাচাই শেষ করে গতকাল অনুষ্ঠিত মূল কমিটির বৈঠকে তার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বৈঠকে সাব-কমিটির সুপারিশ মূল কমিটি গ্রহণ করেছে বলেও বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব কমিটির প্রধান ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এটা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ জানানো হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বড় ঋণের বিপরীতে রক্ষিত সহজামানতের পরিমাণ ঋণস্থিতির ৬০ শতাংশ, যা অপ্রতুল। ঋণ প্রদানে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে ঘাটতি ছিল। এদিকে ছোট ঋণ খেলাপিদের ক্ষেত্রে জামানত ১৫০ শতাংশের মতো। এসব খেলাপি ঋণ আদায়ের হার ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মোট ঋণ খেলাপির মধ্যে ১০ কোটি তদুর্ধ্ব সংখ্যা মাত্র শূণ্য দশমিক শূণ্য ৮ শতাংশ (০.০৮%)। কিন্তু তাদের কাছে খেলাপি মোট খেলাপির ৬৭ শতাংশ। ব্যাংকটির ছোট খেলাপি ঋণের আদায়ের সম্ভাবনা বড় খেলাপির তুলনায় বেশি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সাব কমিটি বলেছে- ব্যাংকটির অনেক গ্রাহকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে জামানত নেই। জামানত থাকলেও বিক্রির প্রক্রিয়া জটিল। জামানতের পরিমাণ ও আদায়ের হার আপাত দৃষ্টিতে ভালো দেখালেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) ১০ কোটি তদুর্ধ্ব ২৭ জন ঋণ খেলাপির এক হাজার ৪৪ কোটি ৪০ টাকার টাকার বিপরীতে এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে কোনো আদায় নেই। এটিকে অত্যন্ত হতাশাজনক ও দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাংকের বেশিরভাগ ঋণের অনুকূলে জামানত নেই। পার্সোনাল গেরেন্টরের মাধ্যমে ঋণ দেয়া হয়েছে। বড় ঋণ গ্রহীতাদের খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বেশি।
ন্যাশনাল ফাইন্যান্স মোট ঋণের (৬৪৩ কোটি) ১৯ শতাংশ শ্রেণিকৃত। শ্রেণিকৃত ঋণের ১০ জন গ্রাহকের কাছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের এপ্রিল ২২ ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রীমের পরিমাণ এক হাজার ৩৮৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২০ জন খেলাপি ঋণ গ্রহিতার বিপরীতে শ্রেণিকৃত ঋণ এক হাজার ৩৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ৯৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ কোটি তদুর্ধ্ব খেলাপি ৪৬ জন এবং সংশ্লেষ অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।