রোজার মাসকে ঘিরে আলোচনার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হামলা করেছে ছাত্রলীগ।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন রেজওয়ান, সাফওয়ান, সাকিব আজাদ তূর্য, ফাহিম দস্তগীর, শাহিনুর আলম রাসেল।
এ হামলার প্রতিবাদে সন্ধায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যায়, আইন বিভাগের ১৫-২০ জন মিলে যোহরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে বসেছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন ও শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল সুজন এসে তাদের হুমকি দিতে শুরু করেন। আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যেতে থাকলে ৪০ জনের বেশি ছেলে পেলে এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।
আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আখতার বলেন, ‘রোজার মাস সম্পর্কে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। এর সঙ্গে অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কোনো ধরনের সংযোগ নেই। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে অতর্কিত হামলা চালায়। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল শাহীনের বুক, দাঁত, ঠোঁট থেতলে দেওয়াসহ নানাভাবে জখম করে। এ হামলায় অন্যান্য আক্রান্তরা হলেন রেজওয়ান, সাফওয়ান। এছাড়া আরও অনেকেই রয়েছেন যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
হামলাকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামলায় শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি সুজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। বাকিরা ঢাবি ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মী। বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা গেলে তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করা যাবে তবে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার স্বাধীনতাটুকু পাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।’
আইন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাফওয়ান বলেন, ‘আইন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে রোজার মাসকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি, পড়াশোনা ও ধর্ম পালনের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করতে পারি এসব নিয়ে আলোচনা করার জন্য ১৫-২০ জন বন্ধুবান্ধব মিলে জোহরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে বসেছিলাম। আনুমানিক দুপুর দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি পরিচয় দিয়ে একজন আসে এবং বলে এখানে আলোচনা করার আগে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া এখানে কোনো প্রকার আলোচনা-ইফতার মাহফিল করা যাবে না। তিনি কথা বলার মাঝেই ছাত্রলীগের একজন এসে আমাদের হুমকি দিতে শুরু করে এবং ছাত্রলীগের ছেলেরা মসজিদে ঢোকার চেষ্টা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কল্যাণ সমিতির সভাপতি পরিচয় দেয়া ব্যক্তি আমাদের বের হয়ে যেতে বলেন৷ আমরা বের হতে নিলে ছাত্রলীগের ছেলরা আমাদেরকে টেনেহিঁচড়ে মারধোর করতে শুরু করে। এরপর ১০-১২ টি বাইকে আরও অনেক ছেলে-পেলে আসে। হামলার এক পর্যায়ে আমরা সকলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাই। এ হামলায় শাহীনুর রহমান রাসেল, সাকিব আজিম তূর্য সহ অনেকে গুরুতর আহত হয়ে দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং আরও ২-৩ জন অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সিকিউরিটি গার্ড কবির হোসেন বলেন, ‘ছাত্ররা বের হয়ে যাচ্ছিলো এমন গেটের বাইরে থেকে কারা যেন হামলা করলে তারা ভেতরের ঢোকার চেষ্টা করছিল কিন্তু হামলাকারীরা তাদেরকে টেনে বাইরে বের করে মারছিল।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করতে বাধ্য হন যে তিনি সুজনকে চেনেন এবং সুজন সেখানে উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীদেরকে বের হয়ে যেতে বলেন বলেও জানান তিনি। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এ ঘটনায় সভাপতি সিরাজুল হকের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল সুজন সম্পূর্ণ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে আমি কেন মারতে যাবো। আমি শুনলাম ফেসবুক থেকে আমার নাম ছবি নিয়ে আমার নামে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এর পেছনে তাদের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে তবে আমি কিছুই জানি না।’