ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম
'স্মার্ট বাংলাদেশ' বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি 'স্মার্ট ক্যাম্পাস' হিসেবে পরিণত করতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১০টি নির্দেশনার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীকে এক একজন 'অনুকরণীয় এবং নির্ভরশীল' বন্ধু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বলা হয়েছে।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী শহীদের রক্তস্নাত সংগঠন, বাংলার ছাত্র সমাজের নির্ভরতার ঠিকানা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাণভোমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অপরিসীম। ইতিহাসের নানা বাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক সে দায়িত্ব পালন করেছে এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাতে নেতৃত্ব দেয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
এতে আরও লেখা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মৃতিধন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ছাত্র সমাজের কাছে অনুকরণীয়। দেশরত্নের পরিকল্পিত 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা' বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ পথ দেখাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি 'স্মার্ট ক্যাম্পাস' হিসেবে পরিণত করতে ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীর জন্য অবশ্য পালনীয় নিম্নোক্ত সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে-
১. সাংগঠনিক কর্মসূচি ও নির্দেশনার বাহিরে ব্যক্তিগত ও দলবদ্ধভাবে যে কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোতে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে। পরিবেশ নষ্ট হতে পারে এমন কোন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হওয়া যাবে না।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর দেশের শিক্ষা উন্নয়ন ও গবেষণা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও শিল্পচর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। এরকম প্রতিটি উদ্যোগ-আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে ছাত্রলীগের কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্মল-মনোরম রাখতে সকল প্রকার ব্যক্তিগত ব্যানার, ফেস্টুন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. মোটর বাইক শোডাউন, উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো, সাউন্ড সিস্টেমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না।
৬. আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ উন্নতকরণে, সুশৃঙ্খল আবাসন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয় পরিমণ্ডলে ক্রিয়াশীল অপরাপর প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বাস কমিটি প্রভৃতির সাথে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক ও সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে।
৮. গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুদের দায়িত্ব পালনে সর্বাবস্থায় সহযোগিতা করতে হবে।
৯. ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো, অপরাধমূলক প্রবণতা, মাদক সংশ্লিষ্টতার সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে।
১০. সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী, নিরাপত্তা বিঘ্নকারী, বেআইনি, ইভটিজিং, র্যাগিং ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের সাথে কোনভাবেই জড়িত হওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে পুলিশ পরিচয়ে চারজনের কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় শনিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই দুই নেতাকে বহিষ্কার ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাইমিনুল ইসলাম ইমন (সহসভাপতি, মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও রাজিব হোসাইন রবিনকে (সহসভাপতি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হল।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাদী কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়েন। বৃহস্পতিবার বাদীসহ তার বন্ধুরা বইমেলায় ঘুরতে যান। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালিমন্দিরের গেটে যান। তখন আসামি রবিন ও ইমন নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের তল্লাশি শুরু করেন। এ সময় তাদের সবার ম্যানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ পরিচয় দেয়া দুজন। এরপর তারা চিৎকার করলে দায়িত্বরত পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।